রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত। সোমবার সকালে জেলা যুগ্ম জজ আদালত-১ এর বিচারক সাদিয়া সুলতানা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ দেন। মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে গত ২৪ মে সংগঠনটির ভোটগ্রহণ হয়েছিল। তবে রাতে ভোটগণনার সময় শ্রমিকদের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। নির্বাচন কমিশনারদের পিটিয়ে ব্যালট ছিনতাই, গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ফলে ওইদিনের নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়। পরে পদত্যাগ করেন নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচনের ফল না হওয়ায় পরে শ্রমিক ইউনিয়নের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর শ্রম অধিদফতরের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক আলমগীর কুমকুম নিজেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। কিন্তু এই নির্বাচন ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র মোতাবেক হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন শ্রমিকদের একাংশ।
তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। এতে অযোগ্যদের ভোটার করা হয়েছে আর বাদ দেয়া হয়েছে যোগ্যদের। তাছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হতে না পারলেও পাঁচ সদস্যের ওই কমিটির চেয়ারম্যানসহ তিনজনই সরকারি কর্মকর্তা। আবার তফশিল ঘোষণার একমাস পর এবং তিনমাসের ভেতর ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও এই নির্বাচনে মাত্র সাত দিন পরই ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছিল।
এদিকে নির্বাচনে কমিটি প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরেছিল। অথচ এ টাকা নেওয়া হয়নি ইউনিয়নের কাছ থেকে। শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেছিলেন, ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী তড়িঘড়ি করে এই নির্বাচন করাচ্ছেন। নির্বাচনের খরচের টাকাও দিচ্ছেন তিনি। এমন নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে দুই সদস্য পদত্যাগ করেন।
পরে গত ১২ অক্টোবর কামরুজ্জামান টুটুল নামে একজন শ্রমিক নেতা নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। টুটুল বলেছিলেন, তিনি যোগ্য হলেও ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। অথচ তিনি এই নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়তেন। তার আবেদন আমলে নিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখা দেয়ার জন্য আদালত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানকে নোটিশ পাঠিয়ে তলব করেন।
পরে রবিবার তিনি আদালতে হাজির হন। এ সময় চেয়ারম্যান আলমগীর কুমকুমের পক্ষে জহুরুল ইসলাম নামে একজন আইনজীবী আদালতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরদিন আদালত এই নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিলেন। আলমগীর কুমকুম বলেন, তিনি কাগজপত্রের অপেক্ষায় আছেন। কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আইনজীবী জহুরুল ইসলাম বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করেছেন। কিন্তু এই সময়ের পরে কী হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারেও তারা কোনো নির্দেশনা পাননি। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দিবেন, সেভাবেই নির্বাচন হবে বলেও জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/১৬ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল