সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের মুগড়া কান্দা এলাকায় ৫ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। শুক্রবার রাতে ভাকুর্তা এলাকার উত্তর পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী উত্তর পাড়া গ্রামের আক্তার হোসেনের মেয়ে ও স্থানীয় উম্মাজা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ভাকুর্তার উত্তর পাড়া এলাকার আক্তার হোসেনের মেয়ের সাথে একই এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে ইকবাল হোসেনের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই বর পক্ষের লোকজনও ওই বাড়িতে চলে আসে। বিয়ের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
বরের অপেক্ষায় যখন বাড়ির সকলে তখন এই বাল্য বিয়ের খবর পান সাভার কলেজের ছাত্রী মুক্তা আক্তার মনি। তিনি সাভার কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অগ্রগামী শিশু পরিষদ, আরআইচ স্টেপ ইয়োথ ফোরাম ও সাভার সনাকের ইয়েচ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইতিমধ্যে মুক্তা বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
তাই বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে মুক্তা শুক্রবার গিয়ে হাজির হয় কনের বাড়িতে। কিন্তু কনেকে না পেয়ে কনের বাবা আক্তার হোসেনকে বাল্য বিয়ের কুফল ও সরকারের আইন বিরোধী অপরাধ সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করেন। এর মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, কয়েকজন সাংবাদিক ও আশেপাশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে হাজির হন। মুক্তা ও তাঁদের হস্তক্ষেপে অবশেষে বন্ধ হয়ে যায় ওই শিশুর বিয়ে।
কনের বাবা আক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ের বিয়ের বয়স ঠিক আছে। কিন্তু স্কুলে ভর্তির সময় জন্ম সনদে বয়স কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। এছাড়া এলাকার ভেতরে একটি ভালো ছেলে পেয়ে ধার দেনা করেও মেয়ের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় তাঁর পরিবারের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি লক্ষাধিক টাকা খরচ করে রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানান। মেয়েকে লেখাপড়ার করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুনেছি সরকার মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দেয়। কিন্তু এখানকার স্কুলে খরচ তো দুরের কথা সময় মতো বেতন পরিশোধ না করতে পারলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন শিক্ষকরা। '
মুক্তা আক্তার মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রিমা'র মা নিলুফাকে বুঝানোর পর তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং তাৎক্ষণিক কিশোরী মেয়েকে বিয়ে না দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেন। এ সময় তাঁরা উপযুক্ত বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তবে ছেলে পক্ষকে যৌতুক হিসেবে দেয়া নগদ এক লাখ টাকা, গহনা ও ফার্নিচারসহ প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানীয় মেম্বরসহ প্রতিবেশীগণ ফেরত দিতে সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর জাকির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাল্য বিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেখানে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাল্য বিয়ে ও এর পরিণতি সংক্রান্ত বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কোন সচেতন নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। তাই এ অবস্থা উত্তরণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল বাল্য বিয়ে বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/২৬ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল