কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বোমা বিস্ফোরণে আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুল ইসলামের সাথে কোন জঙ্গি গোষ্ঠির সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বিস্ফোরণে রিয়াজুলের দুই হাত ও মুখের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তাকে পুলিশি পাহারায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
গত বুধবার মধ্য রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে ওই কলেজ ছাত্র আহত হলেও বৃহস্পতিবার দিনভর অনুসন্ধান চালিয়েও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এর কোন কুলকিনারা খুঁজে পায়নি। আহত ওই কলেজ ছাত্র কুমিল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, কুমিল্লা পুলিশ সুপারসহ, র্যাব, ডিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ওই বাসার অপর বাসিন্দা সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আহত ওই কলেজ ছাত্র কোন জঙ্গি গোষ্ঠির সাথে জড়িত ছিল কিনা তা গুরুত্বের সাথে পুলিশ ও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের নাজিরা বাজার সংলগ্ন ঘোষনগর এলাকার হলি কেয়ার স্কুলের সাথে একটি ৪ তলা বাসার নিচ তলার একটি রুমে থাকতো রিয়াজুল ইসলাম (১৭) ও তার খালাত ভাই সোহাগ (১৪)। বাড়ির মালিক তাদের নানা হাজী আবদুল জলিল পরিবার নিয়ে থাকতো পাশের একটি রুমে। গত বুধবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে রিয়াজুলের রুমে বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে কক্ষের থাই গ্লাসের জানালা ও স্টিলের দরজা ভেঙ্গে যায়।
ওই বাসার ২য় তলার মাসুদ নামের এক ভাড়াটিয়া জানান, মধ্য রাতে বিকট শব্দে পুরো বিল্ডিং কেপে হয়ে উঠে। দরজা খুলে বাইরে গিয়ে নিচতলায় ধোয়ায় আচ্ছন্ন দেখতে পাই। বিস্ফোরণে রিয়াজুলের রুমে থাকা কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এসময় বাড়ির অন্যান্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসে আগুন নিভিয়ে রুমে থাকা রিয়াজুল ও সোহাগকে উদ্ধার করে। বিস্ফোরণে সোহাগ বেশি আহত না হলেও রিয়াজুলের দু’হাত ও মুখের বেশ কিছু অংশ ঝলসে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সকালে বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে’সহ স্থানীয় দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।
এদিকে সন্ধ্যায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ, কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, নিশ্চিত কোন কিছু মন্তব্য করার মতো এখনো সময় আসেনি। তিনি বলেন, আহত কলেজ ছাত্র রিয়াজুলকে এখনো গ্রেফতার কিংবা আটক করা হয়নি, তাকে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা এবং একই রুমের বাসিন্দা সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আহত রিয়াজুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হয়তো বিস্ফোরণের বিষয়ে আরও নিশ্চিত কিছু তথ্য জানা যাবে বলেও পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/৯ মার্চ ২০১৮/হিমেল