নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি প্যাকেজিং কারখানা থেকে আবুল কাশেম চৌধুরী (৬০) নামে এক তত্ত্বাবধায়কের (কেয়ারটেকার) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল ১০টায় ফতুল্লার দেলপাড়া টেম্পু ষ্ট্যান্ড এলাকায় নাম বিহীন একটি প্যাকেজিং কারখানায় এঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল কাশেম চৌধুরী দেলপাড়া এলাকার মৃত ইলমত চৌধুরীর ছেলে। নিহতের তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত কাশেমের স্বজন ও স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে তান্ডব চালিয়েছে। এসময় পুলিশ কারখানা মালিক কাশেম মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যদের মারধরের চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ৫জন আহত হয়েছে।
নিহতের মেঝ ছেলে আবু চৌধুরী জানান, তার বাবা আবুল কাশেম দেলপাড়া টেম্পুষ্ট্যান্ড এলাকায় জনৈক সেলিম মিয়ার মালিকানাধীন প্যাকেজিং কারখানায় দীর্ঘদিন দেখাশোনার (কেয়ারটেকার) কাজ করতেন। মালিক সেলিম মিয়া ব্যবসার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নেয়। ওই টাটা বাবা বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেলিম মিয়াকে দেয়। এক পর্যায়ে টাকার অভাবে কারখানা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তার বাবার পাওনা টাকা দেয়নি সেলিম মিয়া। সেই টাকার জন্য পাওনাদাররা তার বাবাকে চাপ দিলে সে সেলিম মিয়াকে চাপ দেয়। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেলিম মিয়ার সঙ্গে তার বাবার বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে ৮ মার্চ সেলিম মিয়া বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তার বাবা আবুল কাশেমকে ফের কারখানা দেখা শোনার দায়িত্ব দেয় এবং দ্রুত কারখানা চালু করে তার পাওনা পরিশোধ করবে বলে আশ্বাস দেয়।
তিনি আরো জানান, শনিবার সকাল ৮টায় কারখানার তালা খুলে দেয়ার কথা বলে সেলিম মিয়া তার বাবা আবুল কাশেম চৌধুরীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সকাল ১০টায় সেলিম মিয়ার এক লোক এসে বাসায় খবর দেয় আমার বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। পরে কারখানায় গিয়ে দেখি আমার বাবার রক্তাক্ত নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টায় নিহতের আত্মীয়স্বজনরা কারখানায় এসে লাশ দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় কারখানার মালিক সেলিম মিয়াকে মারধর করে এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজিতরা পুলিশের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে।
পরে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিনের (পিপিএম) নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে লাশ ও আটক সেলিম মিয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিতরা ফের পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। এতে পুলিশের ধাওয়ায় স্থানীয় জুয়েল নামে এক যুবক সহ প্রায় ৫জন আহত হয়। তাৎক্ষণিক আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এসময় ধাওয়া করে উত্তেজিতদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
তিনি আরো জানান, পুলিশের গাড়ি টানা হেচরা করেছে তবে ভাংচুর করেনি। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সেলিম মিয়াকে আটক করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১০ মার্চ ২০১৮/হিমেল