দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের পরও দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি জেলেরা।
হালদা বিশেষজ্ঞ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের মতে, নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার যে পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তাই মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়েনি।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে পুরোমাত্রায় ডিম দেওয়া শুরু করে মা মাছ। এরপর ডিম সংগ্রহকারীরা জাল ও নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে ডিম সংগ্রহ অভিযানে। টানা কয়েক ঘণ্টায় হালদা থেকে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। গতবারের চেয়ে এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ এক তৃতীয়াংশে নেমে আসায় হতাশ জেলেরা।
হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির মুখ্য সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, শনিবার রাতে ডিম দেওয়া শুরু করে মা মাছ। ডিম সংগ্রহকারীরা রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে। এবার ৭ হাজার কেজির মতো ডিম আহরণ করে সংগ্রহকারীরা। যা গতবারের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ। যাতে স্বাভাবিকভাবেই ডিম সংগ্রহকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
রুপালি সম্পদের খনি হিসেবে খ্যাত হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা কার্প জাতীয় মাছের ডিম দিয়ে এক সময় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছচাষিদের পোনার চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে দূষণ ও আগ্রাসনের কবলে পড়ে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে হালদা। এক সময় ডিম সংগ্রহ প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি নানামুখী তৎপরতার কারণে ফের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে থাকে হালদা। যার ফলে গত বছর সাম্প্রতিককালের রেকর্ড ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তা ফের নেমে আসে এক তৃতীয়াংশে।
এ বছর প্রত্যাশিত ডিম না ছাড়ার জন্য পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা। যার মধ্যে রয়েছে- নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পর মা মাছের ডিম ছাড়া, নদীর উচ্চ তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, নদীতে ডিম ছাড়ার সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া এবং দূষণ। এসব কারণে এবার ডিম ছাড়ার পরিমাণ কমেছে।
হালদার গত কয়েক বছরের ডিম সংগ্রহের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এরআগে ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম) ওই বছর পুরো মাত্রায় ডিম ছাড়েনি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৪ সালে ৫শ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ১২ সালে ১৬শ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার