২০ জুন, ২০১৯ ০৯:১৩

কখনো সাদিয়া কখনো তানিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

কখনো সাদিয়া কখনো তানিয়া

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিচরণ তার। কখনো সাদিয়া, কখনো তানিয়া, কখনো নদী পরিচয়ে ঢুকে পড়ে বাসাবাড়িতে। সেখানকার অভিভাবকদের মেয়ের বা নাতি-নাতনির বন্ধু-বান্ধবী হিসেবে ভাব জমায়। এক পর্যায়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে পালিয়ে যায়। 

প্রতিনিয়ত এভাবেই অভিনব প্রতারণা চালিয়ে যায় ওই নারী। এ নারী ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সে এক অভিযানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ মে ফের গ্রেফতার হয়। এভাবে সে অন্তত তিনবার একই অভিযোগে ধরা পড়েছে। কিছুদিন জেল খাটার পর বের হয়ে পুনরায় প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ে।

শুধু এই অভিনব প্রতারক চক্রই নয়, রাজধানীতে অন্তত আরও তিনটি ছিনতাই চক্র রয়েছে। এরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর জেলে যায়। তারপর সেখান থেকে বেরিয়েই আবার একই কাজ শুরু করে। এভাবে ওই অপরাধীরা যেন একই বৃত্তে ঘুরপাক খায় বার বার।

২০১৬ সালে তানিয়াকে গ্রেফতারের সময় নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা ও বেশ কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করেছিল বিমানবন্দর থানা পুলিশ। উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাসার দ্বিতীয়তলায় ভাড়া থাকত সে। এ ঘটনার পরই ওই বছরের ১৬ আগস্ট তাকে নিয়ে ‘ভয়ঙ্কর নারী প্রতারকের গল্প’ শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। 
গত মে মাসে তাকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ জানায়, ওই নারী শহরে ২০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ভয়াবহ চুরি হয়। সেই ঘটনায় মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তানিয়ার সন্ধান পায়। 

তারা জানতে পারে- তানিয়া প্রথমে বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর সঙ্গে আগে একবার ওই বাসায় যায়। এরপর বাসার সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। চুরির উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ানের কাছে নিজেকে ডা. তানিয়া এবং বাড়িওয়ালার মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দিত। সে জানিয়েছে, চুরির সময় তাকে সহযোগিতা করে তার ড্রাইভার কালাম, আসিফ, দুলারি ওরফে আফসানা। এদেরও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

গ্রেফতারের সময় তাদের চুরির কাজে ব্যবহৃত উবারচালিত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তানিয়াকে। তার দেওয়া তথ্যে রাজধানীর মাসকট প্লাজার একটি সোনার দোকানে অভিযান চালিয়ে দোকানের কর্মচারী রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। রায়হান তানিয়ার চোরাই সোনা কিনে বিক্রি করত। 

তানিয়া শিকদার জানায়, ইচ্ছা ছিল নায়িকা হওয়ার। কিন্তু সেটা হতে এসে বিভিন্নজনের কাছে প্রতারিত হয়েছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। 

ডিবি সূত্র জানায়, এ বছরের শুরুতে আশুলিয়ায় গরুর ট্রাকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হয় একটি ছিনতাই চক্র। কিছুদিন জেল খাটার পর ১ মার্চ জামিনে বেরিয়ে আসে। এই চক্রটিই আবার ২৩ মার্চে গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদ্দিন তালুকদারের ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। এ সময় তার বাম পায়ে গুলি করে ছিনতাইকারীরা। মিস ফায়ারে জাহিদুল ইসলাম সোহাগ নামের ছিনতাইকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ছিনতাইয়ের অভিযোগে সোহাগকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ। 

এরপর ১৮ এপ্রিল উত্তরার খালপাড় এলাকায় আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। সোহাগের সামনে হাজির করা হলে মুহূর্তেই তাকে চিনে ফেলে। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-পূর্ব) মতিঝিল জোনাল টিমের এডিসি আতিকুর রহমান জানান, এই ছিনতাই চক্রটি অনেক বড়। এরা বার বার ধরা পড়ে জেলে যায়, বের হয়ে আবার একই কাজ করে। এই চক্রটি মূলত ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইও করে। বধির স্কুলের নামে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ছিনতাই করত এরা।


বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর