প্রায় ২৮ ঘণ্টা উদ্ধার তৎপরতা চালানোর পর স্বাভাবিক হয়েছে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ। রাত ১০টার দিকে শেষ ওয়াগনটি তোলা হয়। এরপরই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান সংকেত ও টেলিকম প্রকৌশলী অসিম কুমার তালুকদার।
রাত পৌনে ১১টার দিকে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এটি বিকাল ৪টার দিকে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সব ট্রেনই সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহিদুল ইসলাম।
চারঘাটের হলিদাগাছির দীঘলকান্দি এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের আটটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে সকালের সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিন্টেনডেন্ট আবদুল করিম বলেন, পুঠিয়া উপজেলার দীঘলকান্দিতে লাইনচ্যুত বগিগুলোর উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে সকালের আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা, সাগরদাঁড়ি, সিল্কসিটি, কপোতাক্ষ ও বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। টিকিট ফেরত নিয়ে যাত্রীদের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাতের রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়। ঈশ্বর্দীগামী কমিউটার ট্রেনও ছেড়ে যেতে পারেনি। এছাড়া ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি নাটোরের আবদুলপুরে এবং বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহীর আড়ানীতে আটকা পড়ে ছিল। এতে পুরো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহীদুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে ঈশ্বরদী থেকে রিলিফ ট্রেন আসলেও বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তিনটি বগি উদ্ধার করা হয়। তবে সকালে আর বৃষ্টি না হওয়ায় দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চলতে থাকে।
তিনি আরও জানান, বুধবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনার পর ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আবদুলপুরে আটকা পড়ে। এ কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। কেউ কেউ মাইক্রোবাস ভাড়া করে, কেউ অন্য বাসে উঠে রাজশাহীতে আসেন।
বুধবার রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের যাত্রাও বাতিল করা হয়। ফলে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। রিমকি নামের এক যাত্রী জানান, ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট করেছিলেন। কিন্তু এমন ঘটনার কারণে টিকিট ফেরত দিয়ে বিকল্প উপায়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। মুনকার আলী নামের আরেক যাত্রী জানান, ২ জুলাই টিকিট করেছিলেন। আজ বাধ্য হয়ে ফেরত দিচ্ছেন। ঢাকা ছাড়া অন্য পথের যাত্রী, যারা রাজশাহী স্টেশন থেকে টিকিট করেছিলেন, তারা টিকিট ফেরত দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট হলিদাগাছির দীঘলকান্দি ঢালানের কাছে তেলবাহী ট্রেনের ৮টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তেলবাহী ওই ট্রেনটি খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ঈশ্বরদী হয়ে রাজশাহী অভিমুখে যাচ্ছিল। পথে হলিদাগাছিতে লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটির মাঝখান থেকে বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়। তাই পরে আটটি বগি রেখে সামনের অন্য বগিগুলো নিয়ে তেলবাহী ওই ট্রেনটি বুধবার রাতেই আমনূরা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়।
এদিকে, ঘটনার পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় ট্রান্সপোর্ট অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এই কমিটিকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত তিনটার দিকে সরদহ স্টেশনে মালবাহী ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ছয় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল।
প্রকৌশলীর গাফিলতিতে রাজশাহীতে ট্রেন দুর্ঘটনা : লাইন সংস্কার কাজে নিয়জিত প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে রাজশাহীতে তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনা কবলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, লাইন সংস্কার চলছিল। পুরাতন স্লিপার পরিবর্তন ও পাথর দিচ্ছিল। কিন্তু যারা সংস্কার কাজ করছেন তারা স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কয়েকটি পিন খুলে রেখেছিল। পাথর ফেলার কারণে সেটি ঢেকে যায়। এ কারণে সেটি কারও চোখে না পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, তেলবাহী ৩১টি বগি নিয়ে ট্রেনটি যাচ্ছিল। প্রতিটি বগিতে (ওয়াগনে) আছে ৫০ হাজার লিটার তেল। প্রতি বগির ওজন ৫০ টন। পিন খোলা থাকায় অতিরিক্ত চাপে লাইন সরে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ