রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য সকল প্রকার গুজব ও অপপ্রচার চালানো হয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা অপপ্রচারের পিছনে সুনির্দিষ্ট কারণ আছে, লক্ষ্য আছে। প্রত্যেকটা গুজব ও অপপ্রচার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে। অনেক সময় ধর্মকেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপপ্রচার করা হয়। সরকারকে অস্থিতিশীল করা বা বেকায়দায় ফেলার জন্য গুজব ছড়ানো হয়।
শনিবার 'গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে আমাদের করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। 'জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা' এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
হানিফ বলেন, সম্প্রতি গুজবের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আমাদের কয়েক জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুজব দমন করতে পেরেছে। গুজব কিছুটা হলেও এখন কমেছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলে কথা বলার স্বাধীনতা না থাকার কারণে গুজব ছড়াচ্ছে। আমাদের এখানে কথা বলায় কোনো বাধা নেই। যে যা পারছে বলছে। তাহলে কেন গুজব ছড়াচ্ছে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বলেন, সম্প্রতি যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে তা প্রতিরোধে আমরা ২০ জনের মতো গুজব প্রচারকারীকে আটক করেছি। তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ স্বীকার করেছে যে তারা উন্নয়ন বিরোধী প্রচারণার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। বাকি ৫০ ভাগ না বুঝে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিচ্ছে। এজন্য গুজব রোধে সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গুজব রোধে আমরা কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধিনায়করা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন এবং মানুষের সাথে কথা বলছেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কর্মশালা করছে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এফ এম শাহীন বলেন, গুজব সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। কিন্তু শুধু আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। এজন্য নাগরিক উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে ‘জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা' মানুষের কাছে যেতে চায়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, গুজব ও অপপ্রচারের বাহন হচ্ছে ধর্মান্ধতা, কুশিক্ষা ও অশিক্ষা। গুজব ব্যবহার হয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। যারা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায় তারাই গুজব ছড়ায়। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে কোনো কোনো মহল তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য গুজব ছড়িয়ে থাকে।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, গুজব রোধে আমরা জনগণকে শোষণ করতে পারি না। জনগণ অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হয়। এজন্য আমাদের সচেতনতা দরকার। সত্যটাকে তুলে ধরার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে সচেতন মহল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করে অপপ্রচার রোধ করা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ বলেন, গুজব ও অপপ্রচার অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্ররোচনা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী প্ররোচনা গুজব ছড়ানো একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্ররোচনার মাধ্যমে যদি কোনো অপরাধ সংগঠিত হয় তার জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই। নতুন আইন আনারও দাবি জানান তিনি।
সাবেক ছাত্রনেতা ও ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমেদ বকুল বলেন, এই বিষয়ে একটা মনস্তাত্বিক দিক রয়েছে। একটা লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য গুজবের ভূমিকা থাকে। কিন্তু সেটা পজিটিভ না নেগেটিভ উপায়ে করা হয়-তা দেখতে হবে।
জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার আহবায়ক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা হোসাইনুল বান্নাহ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার সদস্য বাপ্পাদিত্য বসু, ফারাবী বিন জহির, রবিউল রুপম, বাণী ইয়াসমিন হাসি, নাজমুল তরু, অনিকেত রাজেশ প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব