বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শরণার্থী সমস্যা অনেক দেশেই আছে। ৭১ সালে আমরাও শরণার্থী হিসেবে আরেক দেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর আমরা নিজেরাই সে দেশ থেকে চলে এসেছি। আমাদের কারো জোর করে পাঠাতে হয়নি। অথচ আজকে যে রোহিঙ্গারা এসেছে তাদের সরকার প্রত্যাবাসন করতে পারছে না। সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে এমনটি হয়েছে।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল (বিডিসি) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সংকট নিরসনের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটা জাতীয় সমস্যা এবং একটি দেশের সমস্যা। এটি কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়। এটি সমাধানে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে চিরস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হবে।
এসময় আরও বক্তব্য দেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বিডিসির সভাপতি এম এ হালিম। সঞ্চালনা করেন কৃষক দল নেতা এম জাহাঙ্গীর আলম।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংবিধানের ২৫ (ক) অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে- যে কোনো দেশের যে কোনো জায়গার জাতিগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য সংগ্রাম করলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। আজকে রোহিঙ্গারা মুসলমান হোক বা যে জাতিরই হোক তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু এই জায়গায় (রোহিঙ্গাদের বিষয়ে) ঐক্য করে চীনকে বুঝিয়ে দেন, আমরা সবাই এক জায়গায় আছি, তোমরা যদি আমাদের সাথে না থাকো তোমাদেরও ক্ষতি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা আমার দেশে আসলো তখন আমরা মানবিক কারণে জায়গা দিয়েছি। এটা আমাদের কর্তব্য ছিল। তখন খালেদা জিয়াও বলেছেন ‘জায়গা দেন’, আমরা সবাই বলেছি ‘জায়গা দেন’। এখন আমাদের পিছিয়ে গেলে চলবে না, আমরা অকারণে আমাদের সব দায়দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি। এটা বোকামি, এটা 'র' এর প্ররোচনা। আমরা সবাই চাই রোহিঙ্গারা চলে যাক। কিন্তু গলা ধাক্কা দিয়ে নয়, অকারণে অপবাদ দিয়ে নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আমাদের উচিৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজে লাগানো। আমাদের মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা। অন্যদিকে চীনের উপরে সঙ্গবদ্ধভাবে চাপ সৃষ্টি করা।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে রোহিঙ্গারা সভা-সমাবেশ করছে। আমরা সভা করতে পারছি না। আমরা ইঁদুরের মতো লুকিয়ে সভা করছি, আর মুখে বড় বড় কথা বলছি। এটা বোকামির কাজ। রোহিঙ্গাদের দেখে আমাদেরও মাঠে নামা উচিৎ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, রোহিঙ্গারা এর আগেও বাংলাদেশে এসেছিল। তখন তারা তো থাকতে পারেনি, এনআইডি কার্ড পায়নি। কিন্তু বর্তমানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এনআইডি কার্ড করেছে। তারা এই কার্ড কোথা থেকে পেলো? এত টাকা কোথা থেকে পেলো? জনগণ এই হিসাব একদিন পাই পাই করে নেবে। জনগণ যখন হিসেব নেবে তখন পেটের ভেতর থেকে সব হিসেব বের করে তার পরে বিচার করবে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম