২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২০:১২
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বক্তারা

খালেদার মুক্তি আদায় করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:

খালেদার মুক্তি আদায় করতে হবে
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তার মুক্তি আদায় করতে হবে। তাই এখন থেকে তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দলের নেতারা রাজশাহী বিভাগের আট জেলার কর্মীদের আহ্বান জানান।
 
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের অংশ হিসেবে রাজশাহীতেও এর আয়োজন করা হয়। রবিবার বিকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পূর্বপাশের রাস্তায় পাঠানপাড়া এলাকায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
 
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এখন হেঁটে বাথরুমে যেতে পারেন না। বসে খেতে পারেন না। ১৮ মাস ধরে তাকে টেলিভিশন দেখতে দেওয়া হয় না। দুটো মাত্র পত্রিকা দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। তার মুক্তি হবে না। আদায় করতে হবে। এ জন্য নেতাকর্মীদের তীব্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
 
তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি তত্ত্ব দিয়েছেন ক্যাসিনোর টাকা নাকি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মাসিক ভাবে যায়। কী চমৎকার আবিষ্কার আপনার! ক্রিয়েটিভ ইনফরমেশন মিনিষ্টার, বলা যাবে। কারণ, এই তত্ত্ব তিনি আবিষ্কার করেছেন। এই তত্ত্ব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আপনাদের মুখোশ জনগণের কাছে উন্মোচন হয়ে গেছে।
 
তিনি বলেন, এক বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা পার হয়ে গেছে সুইস ব্যাংকে। তার চেয়েও বড় অপরাধ আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখে করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ভোট ডাকাতি করে জনগণকে তার ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করা যাবে না। সরকারের লোকজন বলে সমাবেশ করতে বাধা নেই। কিন্তু গ্রেফতার, বাধা চলছেই। আমার সন্দেহ হয় সরকার কে চালায়। এ সময় মির্জা ফখরুল সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।
 
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনের আগে থেকে ২৬ লাখ লোককে আসামি করা হয়েছে। ১ লাখ মামলা করা হয়েছে। তালিকা করে ১০০ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭০০ অজ্ঞাতনামা। সে অজ্ঞাতনামায় একজনকে ধরে এনে বলে, দাও। তা না হলে চালান। এখানে যারা উপস্থিত আছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষের নামে মামলা আছে। যে বাংলাদেশের মানুষ আগে মামলা চিনত না, কোর্টের বারান্দায় কোনো দিন যাননি, তার বিরুদ্ধেও মামলা আছে। কীসের মামলা? নাশকতার মামলা। নাশকতা কী ও নিজেও জানে না। বোঝেও না। অভিযোগ কী? ষড়যন্ত্র করছে। এসব বাদ দেন। ওসব দিন শেষ। গোটা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন, জোর করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
 
বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের দল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার পক্ষের একটা রাজনৈতিক দল। এর প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক। এই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আমরা। আমরা দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসাতে চাই না। আমরা জনগণকে তার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চাই। আমি দেশের মালিক, জনগণ! তুমি ভোটের অধিকার কেড়ে নেবে? এটা কি মামা বাড়ির আবদার? আমার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে বাইরের দেশে পুরস্কার আর পুরস্কার নেবে? বাইরের পুরস্কার নিয়ে লাভ হবে না। দেশের মানুষের ভালোবাসা নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেটা সম্ভব হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে।
 
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মীর্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 
 
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের কোনো জবাবদীহিতা নেই। তাই সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চলছে। সরকার শুধু পুলিশের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকে পথে পথে পুলিশ দেখে মনে হচ্ছে রাজশাহীতে কারফিউ চলছে। রাজশাহী একটা ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। 
 
পুলিশের উদ্দেশ্যে মীর্জা আব্বাস বলেন, আপনারা কাকে পাহারা দিচ্ছেন ভাই? আজকে নেতাকর্মী খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে, যখন সময় আসবে, যখন আপনারা ধরা খাবেন। তখন এরা বলবে, আমরা তো কোনো নির্দেশ দেইনি পুলিশকে। এরা আপনাদের পক্ষে থাকবে না। সুতরাং এ সমস্ত পাহারা দিয়ে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করবেন না। জনগণ তাদের সঙ্গে নাই। পুলিশ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। কেউ ভোট দিল না, ইলেকশান হলো।
 
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১৭ কোটি মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। চায় না শুধু একজন। তার নাম শেখ হাসিনা। আইনে তার মুক্তি পাওয়া কোনো বাধা নয়। একমাত্র বাধা তিনি। জনগণের ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি। আমরা কার কাছে মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার? আমরা কারও কাছে মুক্তি চাইতে পারি না। আমরা প্রতিজ্ঞা করতে পারি, প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, চেষ্টা করতে পারি, আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমরা যদি প্রতিজ্ঞা করে রাস্তায় নামি, অবশ্যই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। আমরা প্রতিজ্ঞা করলাম। কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে গণতন্ত্রের লড়াই। আমরা শুধু মাইর খাওয়ার জন্য জন্ম নেইনি। রাতের অন্ধকারে পালানো ছাড়া আওয়ামী লীগের পালানোর পথ নাই।
 
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কামরুল মনির, হারুনার রশীদ খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, মোরতাজুল করিম বাবলু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও শ্যামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, শ্রমিক দল সভাপতি আনোয়ার হোসেন, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, চেয়ারপাসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
 
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তবে রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সমাবেশে যোগ দিতে তাদের বেগ পেতে হয়।

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর