বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আজ রবিবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে আমৃত্যু তিনি দলটির উপদেষ্টা পরিষদের জ্যৈষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
রহমত আলী ১৯৪৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আছর আলী ও মাতা শুক্কুরজান বিবি। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। রহমত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১১ বৎসর বয়সে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। ১৯৬২ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রীপুর হাই স্কুল মাঠে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গ্রেফতার হোন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালে ৭ জুন তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দান এবং গ্রেফতার হোন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার ৮ নাম্বার থিয়েটারের সাথে মি: বুশ ও জি এম চ্যার্টাজীর সাথে সমন্বয় করে ফ্লাইট কুরিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ১৯ এপ্রিল ১৯ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগের নবগঠিত কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য’র পদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শতাধিক বস্তিবাসী পরিবারকে দিনাজপুরে পুনর্বাবাসিত করেন। ১৯৭৪ সালে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক পদ লাভ করেন।
১৯৭৬ সালে ১০ জুলাই মতিঝিলের কমাশির্য়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে গ্রেফতার হোন এবং ২ বছর ৮ মাস ১৭ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ১৯৯০ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হোন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টিকেটে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫ বার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হোন। ১৯৯৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ জানান, রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান এ মানুষটি জীবনের সব কিছু উজাড় করে সততা, আন্তরিকতা, দেশ প্রেমের মাধ্যমে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে কর্মী তৈরী করে গেছেন। নিরঅহংকারী, শিক্ষানুরাগী, আদর্শ রাজনীতিবিদ ও সকলের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিটি আমৃত্যু এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছেন।
তিনি আরো জানান, বাদ জোহর ধানমন্ডির শংকর জামে মসজিদে, বাদ আছর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়, বাদ এশা রাজধানীর সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বায়তুল মামুর জামে মসজিদে, আগামীকাল সোমবার দুপুর ১ টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এবং মঙ্গলবার তার নিজ এলাকা গাজীপুরের শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা