ঘড়ির কাটায় তখন রাত ২টা। গভীর রাতে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে বহু নারী-পুরুষ। এখানে দিনমজুর ও মধ্যবত্তিরাও এসেছেন র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের সামনে। এ মানুষগুলো কোন আসামি ছাড়াতে আসেনি। তারা এসেছেন চলমান করোনা মহামারির কারণে কাজ হারিয়ে খাবারের সন্ধানে। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থতি র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রতিদিন এভাবেই কর্মহীন মানুষ র্যাব কার্যালয়ের সামনে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। শনিবার র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন (পিপিএম বার) তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘মধ্যরাতে যখন কেউ রাস্তায় খাবারের জন্য অপেক্ষা করে তখন আপনার কি করা উচিত? তা আমি জানি না। আমি র্যাব-১১ এর সদস্য হতে পেরে গর্বিত। দয়া করে আপনার ক্ষমতার মধ্যে মানুষের জন্য কিছু করুন।’
এদিকে করোনা মহামারীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে র্যাব-১১ এর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্যের করোনা পজেটিভ এসেছে। এতেও থেমে নেই র্যাবের অভিযানিক কার্যক্রম। পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন সমান ভাবে। এদিকে দিনের আলোতে অপরাধীদের পিছু ছোটা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিজেদের ব্যস্ত রাখা, আবার চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রাতের আঁধারে কাঁধে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটছে আবার তারাই।
মধ্যরাতে যখন কোনো দরিদ্র ত্রাণ প্রয়োজন এমন কোনো ব্যক্তির দরজায় গিয়ে টোকা দিয়ে বলছেন, ‘দরজা খুলুন, আমরা র্যাব, ত্রাণ নিয়ে এসেছি’। তখন করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়-কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষগুলোর চোখে এক টুকরো খুশি শরতের কাঁশ বনে জোছনার মতো চিকচিক করে উঠে।
শুধু খাদ্যসামগ্রী যে বিতরণ করছে র্যাব, তাও নয়। চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, তেল, লবণ ও সাবান দেওয়ার পাশাপাশি জিজ্ঞাসা করছে তারা, ‘আপনার ঘরে দুধের বাচ্চা আছে?’ যদি কোনো ঘরে দুধের বাচ্চা থেকে থাকে সে ঘরে ওই বাচ্চার দুধের জন্য নগদ অর্থও সহায়ত করছে তারা।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো এলাকাতে দল বেঁধে গিয়ে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে আসছে র্যাব-১১ এর সদস্যরা। আর এসব ত্রাণ প্রকৃত দুস্থ অসহায়দের হাতেই দিচ্ছেন। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়া কিছু সংখ্যক মানুষের কিছু দিনের জন্য হলেও খাদ্যের সংস্থান হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক