রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইন্দিরা মঞ্চ ও স্থায়ী স্মৃতি ফলক স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি। ‘মিত্রবাহিনী দিবস’ উপলক্ষে রবিবার সকালে ফুল দেয়ার পর উদ্যানে ইন্দিরা মঞ্চ ও শহীদ ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সেনাদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতি ফলক স্থাপনের দাবি জানানো হয়।
একাত্তরের এই দিনে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছে। তাদেরই স্মরণে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠন বিগত কয়েক বছর ধরে ‘মিত্রবাহিনী দিবস’টি পালন করে আসছে।
অস্থায়ী স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদসহ আরও কয়েকটি সংগঠনে। এরপর এখানেই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার সূচনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ বাসা থেকে মোবাইলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটোয়ারী, সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো. ফজলে আলী, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, মমতাজ চৌধুরী, ইসহাক খান, মতিলাল রায়, শফিকুল ইসলাম ও মাহী বি চৌধুরী। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আশরাফ আহমেদ লিয়ন।
বিচারপতি (অব.) শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারতের সক্রিয় সহযোগিতা ছিল বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা প্রাণ দিয়েছে। তাদের এই ঋণ শোধ হবার নয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ তৈরি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই মঞ্চ ভেঙে ফেলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা এই দেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখেছিল। তারা আজও ষড়যন্ত্র করছে, পাকিস্তানি দূতাবাস এদের মদত দিচ্ছে।
অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে বা স্থাপনের বিরোধিতা করে একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর মোশতাক-জিয়া আবার এদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
এ সময় শহীদ ভারতীয় সেনাদের স্মরণে ব্রাহ্মবাড়িয়ায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করারও দাবি জানায় বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি। এবারই প্রথম বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে দিবসটি পালন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন