১৩ বছরের বড় ভাই মাহিন ও ৯ বছরের ছোট বোন মাহিয়া। ওদের বাবা-মা এখন আর নেই। সাথে নেই ৭ মাসের ছোট বোনটিও। সংসারে শুধু ওরা দুই ভাই বোনই বেঁচে আছেন। সোমবার বিকালে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মাত্র ১৩ বছরের মাহিন নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মৃত বাবা-মায়ের লাশ সনাক্ত করে বুঝে নেন। তবে ৭ মাসের ছোট বোনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে ওই ছোট বয়সেই মা-বাবার লাশ বুঝে নিতে হয় মাহিনকে।
লাশ সনাক্ত করতে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারায় ছেলেটি। ওই সময় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ মাহিনকে শান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে মাহিন জানান, বাবা- মায়ের সংসারে বাবা আনোয়ার শেখ, মা মাকসুদা ৭ মাসের ছোট বোন মাসনুরা ছাড়াও মাহিয়া নামে আরেক বোন আছে। তিন ভাই বোনের মধ্যে মাহিন বড়, মেজ মাহিয়া ও ছোট সাত মাসের মানসুরা। মাহিন শনির আখড়ার গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তারা তিনজেনই তাদের রাজধানীর শনিরআখরা এলাকায় বাবা মায়ের সাথে বসবাস করছিল। তার নানা বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরের চর ক্যাওড়া হোগলারকান্দি গ্রামে।
মাহিন আরো জানান, রবিবার দুপুরে হঠাৎ বাবা মা আমার নানা বাড়ি মুন্সিগঞ্জে যাবে শুনে আমিও যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি। তখন বাবা বললো কাল সকালেই আমরা চলে আসবো। একটি রাত তোমার ছোট বোন মাহিয়াকে নিয়ে বাসায় থাকো। মাও বাবার মত আমাকে অনেক আদর করে বুঝিয়ে বললো আর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাবা- মা দুজনই আমার ও মাহিয়ার কপালে মুখে অনেক চুমো খেলো। পরদিন বাবা মার কোন ফোন না পেয়ে নানা বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারি বাবা মা কেউ মুন্সিগঞ্জে যায়নি। তখন টেলিভিশনে খবর দেখে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষায় লঞ্চডুবির স্থানে এসে প্রথমে বাবা ও পরে মায়ের লাশ সনাক্ত করি।
লাশ সনাক্ত করতে গিয়ে মাহিন চিৎকার করে বলছিল, 'ও আম্মু তোমার চুমু তো এখনো কপালে লেগে আছে। তুমি কথা বলো মা। ও বাবা আমি আর মাহিয়া এখন কি করব।'
ওই সময় চোখের জল ফেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ইউএনও নাহিদা বারিক মাহিনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
ইউএনও নাহিদা বারিক বলেন, মাহিনকে বাবা বাবা বলে অনেকেই শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাজারো বাবা ডাকে মাহিন তৃপ্ত হয়নি। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন মাহিন। অবশেষে মাহিনকে তার বাবা আনোয়ার শেখ ও মা মাকসুদার মরদেহ বুঝে নিতে হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৭ মাসের ছোট বোন মানসুরা। সোমবার বিকালে উপজেলা প্রশানের কাছ থেকে লাশ বুঝে নিয়ে রাতেই শনির আখরায় তাদের দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য গত রবিবার সাবিত আল হাসান নামক লঞ্চটি ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে এসকে থ্রি নামক একটি কোস্টার জাহাজ উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকায় পেছন থেকে লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। পরে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল