রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকায় দেড় মাস আগে হত্যার শিকার হন নাসরিন সুলতানা নামের এক নারী। তিনি নিখোঁজের সপ্তাহ খানেক পর অপহরণ মামলা করে পরিবার।
এই মামলার তদন্তে নেমে খুনের লোমহর্ষক তথ্য জানতে পারে পুলিশ। অপহরণে সন্দেহ ছিল যার দিকে, তদন্তে বেরিয়ে এলো তিনিই খুনি। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে আবদুল হাই নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, ‘ত্রিমুখী সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে’।
শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর আংটি, ঘড়ি ও ব্রেসলেট দেখে ওই নারীর মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, স্বামীর সঙ্গে নাসরিন সম্পর্কের ইতি টেনেছিলেন কয়েক বছর আগে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর কদমতলী থানার গোয়ালবাড়ি এলাকায়। পূর্বপরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। গত ১৮ মে সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান নাসরিন সুলতানা, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। বেরিয়ে যাওয়ার পর, সন্ধ্যার দিকে নাসরিন ফোন করেন নিচতলায় থাকা প্রতিবেশীকে। অনুরোধ করেন, মেয়েকে খাবার পৌঁছে দিতে। মেয়ে নাবিলাকেও ফোন করে জানান, আসতে দেরি হবে। মেয়ে নাবিলা তখনই মায়ের গলায় অস্বাভাবিকতা টের পায়।
নাবিলা পুলিশকে বলেছে, ‘ওইদিন ফোন করে আমার মা বলেন, তোমার হাই মামা আমাকে জুস খাওয়াইছে, আমার মাথা ঘুরতেছে। যখনই জুসের কথা বলেছে, তখনই আমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লেগেছিল।’
কিন্তু পরদিন সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে আবদুল হাই মামলা করতে নিরুৎসাহিত করেন নাসরিনের পরিবারকে। যে কারণে মামলা করার আগ্রহ থেকে সরে দাঁড়ান পরিবারের সদস্যরাও।
একপর্যায়ে নিখোঁজের সপ্তাহ খানেক পর অপহরণ মামলা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আসে আব্দুল হাইয়ের নাম। নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর, চালকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চালক স্বীকার করেন, সেদিন গাড়ির ভেতরেই গলা টিপে নাসরিনকে হত্যা করেন আব্দুল হাই। দড়ি দিয়ে বাটখারা বেঁধে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে লাশ ফেলে দেন শীতলক্ষ্যা নদীতে।
আবদুল হাইও স্বীকার করেন নিজ হাতে খুনের কথা। পরে জানা যায়, ঘটনার ৩ দিন পর রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে যে মরদেহ উদ্ধার করেছিল সেটিই নাসরিনের। আংটি, ঘড়ি ও ব্রেসলেট দেখে সেটি শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।
এই হত্যার বিষয়ে আবদুল হাই আর তার চালক দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি এখন অপহরণ থেকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে।
গ্রেফতার আব্দুল হাইয়ের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আব্দুল হাইকে তার ড্রাইভারসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর আব্দুল হাই স্বীকার করেন যে- তিনি তাকে (নাসরিনকে) মেরে ফেলেছেন। নাসরিন সুলতানা আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে ‘কমিটমেন্ট’ করেছিলেন যে- তিনি হাইকে ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াবেন না। কিন্তু, সেই ‘কমিটমেন্ট ব্রেক’ করে তিনি একাধিক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল হাই নাসরিনকে হত্যা করেন।’
ডিসি আরও বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের পর নাসরিনের মরদেহটি অজ্ঞাত ছিল। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তারাই সেটি দাফনের ব্যবস্থা করে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ