সারা বিশ্বের মতো বুধবার বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবস। রক্ত জমাট বাধা বা থ্রম্বোসিস জনিত রোগগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাধার সমস্যার ব্যাপারে সজাগ থাকা।
থ্রম্বোসিস বলতে রক্তনালীতে অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাধাকে বোঝায়। শরীরে যেকোন কাঁটাছেড়ার পরে রক্ত জমাট বেধে রক্তপড়া বন্ধ হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো কারণে যদি অস্বাভাবিকভাবে রক্তনালীর ভেতরে রক্ত জমাট বেধে যায়, তাহলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। রক্ত প্রবাহিত না হওয়ার কারণে সেখানের কোষগুলোর মৃত্যু হতে পারে এবং আক্রান্ত অঙ্গের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি বা আংশিক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোক হতে পারে। হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধার ফলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। পায়ের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধার ফলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হতে পারে। বিশেষ করে যারা লম্বা সময়ে অসুস্থতা বা অপারেশনের কারণে শয্যাশায়ী থাকেন বা যাদের ক্যান্সার বা অন্য কোনো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থাকে তাদের ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জমাট বাধা রক্তের অংশ রক্তের সাথে পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসের রক্তনালীতে আটকে ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে পালমোনারি অ্যাম্বোলিজম করতে পারে এবং মৃত্যুও ঘটাতে পারে। চলমান করোনায় মৃত্যুর বড় অংশের পেছনে এই পালমোনারি অ্যাম্বোলিজমকে কারণ মনে করা হয়ে থাকে।
বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর বড় কারণ স্ট্রোক ও হৃদরোগের পেছনেও থ্রম্বোসিস দায়ী। থ্রম্বোসিস জনিত রোগের ভয়াবহতা বিবেচনায় এ ব্যাপারে সকলের সচেতনতা কাম্য। জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি থ্রম্বোসিস জনিত জরুরি রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্ব থ্রম্বোসিস দিবসকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ সচেতনতামূলক র্যালির উদ্বোধন করেন। এসময় প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দীন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগে. জেনা. ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম এবং হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহসহ হেমাটোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে থ্রম্বোসিস জনিত রোগসমূহ সম্পর্কে রোগী, রোগীর স্বজন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে উপাচার্য গুরুত্বারোপ করেন।
চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে বিশেষায়িত ক্লিনিকের মাধ্যমে থ্রম্বোসিস জনিত রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন। এ দিবস উপলক্ষে রাতে থ্রম্বোসিস বিষয়ক বৈজ্ঞানিক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই