গুমের ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো। পাশাপাশি তারা স্বজনদের ফেরত চেয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে হয়রানির প্রতিবাদে এক সমাবেশে এ দাবি জানানো বলা হয়। বক্তারা বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই, জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রের অনুমোদন চাই, আমরা আমাদের স্বজনদের ফেরত চাই এবং ভবিষ্যতে যেন গুম হওয়া পরিবারের কোনো সদস্য পুলিশি হয়রানির শিকার না হয়, তার নিশ্চয়তা চাই।’
মায়ের ডাকের সংগঠক আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা প্রমুখ।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন লক্ষ্মীপুরে গুম হওয়া আলমগীর মোল্লার বাবা মো. শাহজাহান মোল্লা, ফরিদ আহমেদ রাজুর বোন শিল্পী আক্তার, মিরপুরের ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্মৃতি, আব্দুল কাদের মাসুম ভূঁইয়ার মা আয়শা আলী, পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের মাহাবুব সুজনের ভাই জাহিদ খান সাকিল, সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ।
গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, তদন্তের নামে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বাসায় বাসায় গিয়ে পুলিশের হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি তারা সুষ্ঠু তদন্ত করুক এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করুক।
২০১৯ সালের ১৯ জুন ইসমাইল হোসেন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নাসিমা আক্তার সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কী আচরণের মুখোমুখি হয়েছেন তার বিবরণ দেন। নতুন করে পুলিশি তৎপরতার কারণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি থানায় গেছি, পুলিশ আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছে। পুলিশের ডিসি আমার চিঠিটা একবার পড়লেন না। বলেন র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি র্যাবের কাছে যান। পুলিশ তিন বছর পর এখন এসে জিজ্ঞাসা করে, আমার স্বামী আসলে গুম হয়েছে, নাকি কোথাও চলে গেছে।’
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে যখন ভয়ের চাষ চলছে, তখন পত্রপত্রিকায় দেখছি, ঘটনা চাপা দিতে পুলিশ কাগজ নিয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে যাচ্ছে। পুলিশকে এই সরকার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। জাতিসংঘ থেকে ৫৪ জনের তালিকা দিয়ে সরকারের কাছে তাদের সন্ধান চাওয়া হয়েছে। পুলিশের চাপের মুখে নতি স্বীকার করবেন না। পুলিশ বাসায় যাচ্ছে একটি কাগজে সই করাতে, যেন তারা বিচার থেকে মুক্তি পেতে পারে।’
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজতে চাপ দিচ্ছেন। সরকার জনগণের করের টাকায় পুলিশ বাহিনীর বেতন দেয়, কিন্তু তারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পুলিশকে ব্যবহার করছে।