ঈদের ছুটিতে ঢাকার মতই ফাঁকা হয়ে যায় সাভার শিল্পা এলাকা। সব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়। আর এই সুযোগে ঘুরে বেড়ান শহরবাসী। যানজটমুক্ত পরিবেশে অনেকেই সন্তানদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিনোদনপ্রেমীরা ভিড় জমান আশুলিয়ার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
এবার বৃষ্টি না থাকায় বিনোদন প্রেমীদের উপস্থিতিতে ঈদের দিন থেকে সাভারে ও আশুলিয়ার থিম পার্ক, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্কসহ বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। এসব পার্কে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিন এসব পার্ক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ-শিশু নগর জীবনের কোলাহল থেকে একটু দূরে সাভারে ও আশুলিয়ার বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দে মেতে উঠেছেন। বিশেষ করে সকাল থেকে পার্কগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ভ্রমণ স্পট, মিনি চিড়িয়াখানা, যুমনা পার্ক, নীলা বর্ষা পার্ক, চামড়া শিল্প নগরী হরিণধরা এবং বেশকিছু বাগান বাড়িতে ভ্রমণপিপাসুরা দলে দলে ভিড় করছেন। ঈদের পরের দিন বুধবার সকাল থেকে এসব বিনোদন কেন্দ্রে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ছে।
আজ কোনো বৃষ্টি না থাকায় বিনোদন প্রেমীদের উপস্থিতি ছিল অন্যবাবের চেয়ে বেশি। আশুলিয়ার থিম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডমেও প্রবেশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। ভেতরে বিভিন্ন রাইডসে চড়তে টিকিট সংগ্রহের পর লম্বা লাইন দেখা গেছে। প্রায় সব রাইডসে যেন মানুষের মিছিল।
তবে চরকা বুড়ির চক্করে লোক সমাগম বেশি লক্ষ করা গেছে। এ পার্কে বেড়াতে এসেছেন কাদের হোসেন পরিবার নিয়ে। তার মেয়ে সুমি চড়বে রোলার কোস্টারে। বাবার নিষেধ কিছুতেই শুনবে না সে। কঠিন বায়না ধরেছে। বাধ্য হয়ে তিনজন মিলে রোলার কোস্টারে উঠলেন। নামার পর বেজায় খুশি সুমি। সে জানায়, এত মজা আর কখনই পাইনি।
আশুলিয়ার বারইপাড়ায় অন্যতম আরেক বিনোদন কেন্দ্র নন্দন পার্কে চলছে ঈদ আনন্দ উৎসব। সকাল থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। নন্দন ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্কে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গাজীপুর থেকে ফারুক হোসেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন নন্দন পার্কে। অবরুদ্ধ পরিবেশ থেকে নন্দন পার্কে খোলামেলা জায়গায় আনন্দ করার জন্যই এসেছেন তারা।
ফারুকের স্ত্রী পারুল বলেন, করোনার দুই বছর বের হতে পারেনি। তাই আজ বের হয়েছি। এখন খুব ভালো লাগছে। শহরে জীবন থেকে খানিক রিলাক্স। সবাই মজা করেছি, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
একই মনোভাব জানালেন সাভারের গেন্ডা থেকে আসা মিতু আক্তার। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্কটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ ও ঘুরে বেড়িয়ে অনেক মজা করলাম, দারুন লাগছে। বান্ধবীদের সাথে এসেছি। এই পার্কে সব রাইডসে ভিড় রয়েছে। তবে ওয়াটার কোস্টার, প্যাডেল বোট, কিডস ড্রিম ওয়ার্ল্ড ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডসহ বেশ কয়েকটি রাইডসে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর চড়তে হচ্ছে।
সাভারে রয়েছে মনোরম কারুকার্যে তৈরি লাখো শহীদের স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ১৬ ডিসেম্ভর ও ২৬ মার্চ ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে এই স্মৃতিসৌধকে সাজানো হয়ে থাকে। ঈদ ও পূজা পার্বনসহ বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে মানুষ দল বেঁধে ভিড় করেন এখানে। ঈদের আমেজে প্রতি দিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন জাতীয় সৌধে।
ফ্যান্টাসি কিংডমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্জরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত দুই বছরের ঈদের চেয়ে এবার ঈদ আমাদের জন্য একটু আনন্দদায়ক। কারণ গত দুই বছরে মানুষ বাসা থেকেও বের হতে পারেনি আমরাও পার্কে দর্শনার্থী পাইনি। এবার ঈদে টার্গেট রয়েছে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী পাওয়ার। দর্শনার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তাসহ সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নন্দন পার্কের জেনারেল ম্যানেজার আর্শাদ নুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারের ঈদটা আমাদের জন্য একটু স্পেশাল। কারণ মানুষ এবার বাসা থেকে বের হতে পারবে আর মানুষ বের হতে পারলেই তারা বিনোদন কেন্দ্রে আসবে। তাই আশা করছি দুই বছর বন্ধ থাকার সেই ক্ষতি পূরণ করতে পারবো। আর এবার কিছু রাইড নতুন যুক্ত করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই