২৭ মে, ২০২২ ১৭:৪৪

অটো রাইস মিলগুলোতে ধানের জাত পৃথক না করায় জাত নিয়ে প্রশ্ন!

নজরুল মৃধা, রংপুর

অটো রাইস মিলগুলোতে ধানের জাত পৃথক না করায় জাত নিয়ে প্রশ্ন!

প্রতীকী ছবি

এই ধান ডাইনে রাখ, এটা বাঁয়ে রাখ। এটা অটো রাইসমিলের প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন একটি অটো রাইসমিলে প্রায় দু’শ মেট্রিক টন ধানের প্রয়োজন হয়। এসব ধানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর একটি মোটা, একটি চিকন। এসব ধান নানা জাতের এবং গুণগত মান আলাদা আলাদা হলেও জাত পৃথক করে ধান থেকে চালে রুপান্তরিত করা হচ্ছে না।

অটো রাইস মিলগুলো সব প্রজাতির ধানই এক সাথে ভেঙে চাল করছেন। এতে ধানের গুণগত মান নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা-চিকন ধানের গুণগত রকম ভেদ থাকলে পৃথকভাবে ধান না ভাঙায় আমরা বারো মিশালি ধানের চাল খাচ্ছি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানিরা উন্নত প্রজাতির ধান আবিষ্কার করলেও পৃথকভাবে ধান থেকে চাল করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিজ্ঞানিদের আবিষ্কার মাঠেই পরে থাকছে। সাধারণ জনগণ উচ্চ ফলনশীল, গুণগতমানের ধান থেকে মাড়াই করা চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্রেতারা বুঝতেই পারছে না, তারা কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন। এমন অভিযোগ বেশ কয়েকজন ক্রেতার।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে ১০ হাজার প্রজাতির বেশি ধান রয়েছে। বাংলাদেশেও ২ হাজার প্রজাতির বেশি ধান রয়েছে। এর মধ্যে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দেড় শতাধিক প্রজাতির ধান আবাদ হয় বিভিন্ন মৌসুমে। বর্তমানে এই অঞ্চলে উৎপাদিত ধানের ৬০ শতাংশই হাইব্রিড জাতীয়। অথচ বাজারে গেলে ব্রি-২৮, পাইজাম, নাজিরশাইল, মিনিকেট ছাড়া অন্য প্রকার ধানের চাল পাওয়া যায় না। অথচ ধান থেকে যখন চাল করা হয়, তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮/১০ প্রজাতির ধান একত্রে করে চাল করা হচ্ছে। অথচ কৃষি অফিসের মতে মিনিকেট বলতে কোনো চাল নেই।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত অটো রাইসমিলগুলোতে যখন ধান ভাঙা হয়, তখন ধানের গুণগত মান অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। অটোরাইস মিল মালিকরা ধানের মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রাম-গঞ্জে দালাল ফরিয়া নিয়োগ করে। এরা মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছে ঠিকই। কিন্তু পৃথকজাত পৃথকভাবে না ভাঙানোর ফলে অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ধানের চাল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। বারো মিশালি ধানের চাল একদিকে যেমন সঠিক মান ধরে রাখতে পারছে না, অপরদিকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না।

অটো রাইসমিলগুলো দাবি করেন, তারা বিভিন্ন জাতের ধান পৃথক-পৃথকভাবে ভেঙে বাজারজাত করেন। তবে অটো রাইসমিলগুলোর দাবির সাথে একমত নয় কৃষি বিভাগ। তাদের মতে একটি অটো রাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ২০০ মেট্রিক টন ধান লাগে। এর মধ্যে শুধু চিকন ও মোটা বাছাই করা হয়। কিন্তু কোনটা কোন জাতের, তা পার্থক্য করা হয় না।

বাংলাদেশ অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লাইক আহমেদ বলেন, আমরা পৃথক জাত পৃথকভাবে ভেঙেই বাজারজাত করি। চিকন ও মোটা ধান আলাদাভাবে চাল করি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার উপ-পরিচালক (এলআর) আবু সায়েম বলেন, অটোরাইস মিল মালিকরা জাত পৃথক না করে ধান থেকে চাল তৈরি করছে। ফলে কৃষি গবেষণার আবিষ্কৃত ধানের গুণগত মানের ধানের পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে না। এক সাথে বেশ কয়েক প্রজাতির ধান থেকে চাল করায় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সাথে জনগণ কোন ধানের চাল খাচ্ছে, এটা বুঝতে পারছে না।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর