বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয় যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বর্জ্য শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই উৎপাদিত হয়। প্রতিদিন উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের একটি বৃহত্তর অংশই আবার থেকে যাচ্ছে অসংগৃহীত, যা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে নগরের আশেপাশের রাস্তা, খাল, বিল, জলাধার ও নিম্মাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়। এসব বর্জ্য সংগ্রহে সরকারের বাজেট থাকলেও ব্যবস্থাপনায় কোন বাজেট নেই। ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা কলিং প্রকল্পের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলিং প্রজেক্ট-এর টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার সুমন আহসানুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ, বাংলাদেশ রিসার্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন, ফাতেমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক, এনডিবিইউএস, প্রোমোটিং এ্যাডভোকেসি এন্ড রাইটস এর চিফ অব পার্টি মইনুদ্দীন আহমদ এবং ডিএসকে এর পরিচালক এমএ হাকিম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার ফলে পরিবেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, চর্মরোগ, ইউরিন ইনফেকশন, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যান্সার, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড রোগের মতো বিপজ্জনক রোগের বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ধরনের রোগ সাধারণত অবিশুদ্ধ ও অনিরাপদ পানি খাওয়া, অনেকক্ষণ ময়লার মধ্যে থাকা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ নোংরা পরিবেশের কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রামের মানুষের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীদের শিশুমৃত্যুর হার বেশি। যেখানে বস্তিতে প্রতি হাজারে ৫৭ শিশুর মৃত্যু হয়, সেখানে গ্রামে হাজারে মারা যায় ৪৯ জন। এসব রোগ-শোকে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। পরিবারে তাদের বোঝা বলে মনে করা হয়। ফলে অনেকেই তাদের ভিক্ষাবৃত্তির সাথে যুক্ত করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রান্তিক নাগরিকরা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেই থাকে না, বরং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও পড়ে নেতিবাচক প্রভাব। আবার সুচিকিৎসার অভাব তাদের স্বাস্থ্যগত নানারকম জটিলতা তৈরি করে। এগুলো তাদের মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
এসব অব্যবস্থাপনা দূর করতে বক্তারা বেশকিছু দাবি জানান। এগুলো হলো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে একযোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজ নিজ কর্মপরিসরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য দুর্ভোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে কাজ করতে পারে; বস্তি এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলো উদ্যোগ নিতে পারে; বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করা; মানসিক রোগ এখনও বাংলাদেশে নীরব খুনির ভূমিকায়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক