জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার ও কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরআন খতম, দোয়া ও কবর জিয়ারতের আয়োজন করা হয়।
নিষাদ ও নিনিতসহ দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামী হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও দোয়ায় শরিক হওয়ার জন্য সোমবার রাতে তিনি নুহাশপল্লীতে আসেন মেহের আফরোজ শাওন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তিনি তার সন্তান, নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারি, হিমু পরিবহনের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দর্শনার্থীদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করেন।
পরে সাংবাদিকদের মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ুন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তাও আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তো বা হবে। সে ধৈর্য্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না। যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাট হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮/১০ টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যেরকম আছে সেটা সেরকম হবে না, সেই জোড় আমার নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভাল একটা খবর দেই। হুমায়ুন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণী) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সু-খবর হলো ওই স্কুলটি হুমায়ুন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগীতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এরকম ছোট ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাব। কিন্তু আমি এখানো শক্তি অর্জন করতে পারিনি, যে আমি একটা ডাক দিব বা আমি কাউকে বলব। আমি বিভিন্নজনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যে ধরনের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মাণের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের স্বত্তাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে। তিনি দাবি করেন, নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বে-সরকারি অথবা পারিরবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরী প্রয়োজন। এসময় অন্বেষা প্রকাশনের প্রকাশক মো: শাহাদাত হোসেন, সময় প্রকাশণের পাবলিশার ও এডিটর ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পরিচালক এ কে নাছির আহমেদ, মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্সের স্বত্তাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রুব পদ প্রকাশণীর স্বত্তাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্তাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশন্সর স্বত্তাধিকারী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে হুমায়ূন আহমেদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল ও তার পছন্দের খাবার দিয়ে এতিমদের আপ্যায়ন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার স্বপ্নের নুহাশপল্লীর লিচুগাছ তলায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল