হাসপাতালের কর্মচারী ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসানকে বদলি করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডা. শরীফুল হাসানকে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে। বদলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান নিজেই।
এর আগে তাকে অপসারণের দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করে কর্মচারীরা। ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে পরিচালককে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মচারী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে হাসপাতালে আসেননি পরিচালক।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির খবরে সকাল থেকে হাসপাতাল চত্ত্বরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা ১২টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করে ইন্টার্নরা। পরে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আ.খ.ম আখতারুজ্জামানকে ৪ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন তারা। এতে ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের কর্মস্থল ও আবাসস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, ইন্টার্ণদের আইডি কার্ড প্রদান, ডা. মিলন হোস্টেলের জন্য কেনা আসবাবপত্র দ্রুত সরবরাহ, ডক্টরস ক্যান্টিনের মানোন্নয়ন করার দাবি জানানো হয়।
ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. রাকিবুল হাসান তারেক বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অভিযোগ নেই ইন্টার্ণদের। ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের নাম ব্যবহার করে কে বা কারা হাসপাতালের মূল গেটে ব্যানার টানিয়েছে। হাসপাতালের পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত করতে কোন মহল ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের নাম ভাঙাচ্ছে। আমরা ৪ দফা দাবি জানিয়ে পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। এটি অবিলম্বে কার্যকর করা না হলে আমরা কর্মবিরতির মত আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
অপরদিকে সোমবার সকাল থেকে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে হাসপাতালের ৩ শতাধিক কর্মচারী। এরপর তারা হাসপাতালের উপ-পরিচালকের কাছে তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
হাসপাতালের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহীন হোসেন বলেন, হাসপাতাল পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান কর্মচারীদের অন্যত্র বদলির হুমকি, আউট সোর্সিং নিয়োগে মূল্যায়ন কমিটির মতামতকে আগ্রাহ্য করে ও শিডিউল মোতাবেক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করেনি। হাসপাতালের পরিচালকের অপসারণের দাবিতে আমরা বিক্ষোভসহ স্বারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছি।
উল্লেখ্য, রংপুর মেডিকেল কলেজে দালাল ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট রুখতে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ করে সর্বস্তরের চিকিৎসকরা। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৬ কর্মচারীকে রমেক হাসপাতাল থেকে বদলি করা হয়। এরপর ২ অক্টোবর হাসপাতালের উপ-পরিচালকসহ ৩ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী হাসপাতাল পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মচারী অফিস সহায়ক মামুনুর রশীদ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান নয়নের বিরুদ্ধে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাসপাতালের স্বাভাবিক, স্পর্শকাতর, জরুরী বিভাগে জখমী সনদপ্রদান শাখা, অন্যান্য সরকারী কাজসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে বিধি বর্হিভূতভাবে হস্তক্ষেপ ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সতর্ক করে নোটিশ জারি করেন। এর পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।
ডা. শরীফুল হাসান বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালের গুটি কয়েক অসৎ লোকের কারণে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্ট করেছিলাম।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল