ঘন কুয়াশায় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে নৌ পথ। শীতে তীব্র কুয়াশায় গত কয়েক দিনে যাত্রীবাহী নৌযানের ৫টি দুর্ঘটনায় শঙ্কিত নৌযান মালিক-শ্রমিকরা। শীতে নৌযান চলাচল নিরাপদ করতে আইন মেনে নৌযান চালানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন নৌযান মাস্টাররা। ঘন কুয়শায় নৌ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও ওই নির্দেশ না মানায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তারা।
গত ৪ জানুয়ারি দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে চাঁদপুরের মোহনগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনা নদীতে বিপরীতমুখি একটি কার্গো জাহাজের সঙ্গে যাত্রীবাহী এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের বামপাশ বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় এক নারী যাত্রী নিখোঁজ এবং ৫ জন যাত্রী আহত হয়।
৫ জানুয়ারি সকালে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা এলাকায় স্থানীয় রুটের এমভি চন্দ্রদ্বীপ নামে একটি লঞ্চের সঙ্গে বিপরীতমুখি অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে স্থানীয় রুটের চন্দ্রদ্বীপ লঞ্চের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আহত হয় ১৫ জন যাত্রী।
১০ জানুয়ারি সকালে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী এমভি সুন্দরবন-১৪ ও চাঁদপুর রুটের এমভি শতাব্দি বাঁধন নামে দু’টি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এর আগে ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে চাঁদপুর সংলগ্ন মেঘনা নদীর মিয়ারচর এলাকায় যাত্রীবাহী এমভি টিপু-১৪ এবং এমভি সুরভী-৮ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় লঞ্চের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়।
মধ্য ডিসেম্বরে মেঘনা নদীতে বিপরীতমুখি একটি কার্গোর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে হয় সুন্দরবন-১২ নামে একটি লঞ্চের। এতে তেমন কেউ হতাহত না হলেও সুন্দরবন-১২ লঞ্চটির অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়।
এছাড়া গত কয়েকদিনে অন্তত ৮টি মালবাহী জাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্ঘটনাকবলিত এমভি সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইউনুস।
ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী বিভিন্ন রুটের নৌযান মাস্টারদের সঙ্গে কথা বল জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের মাস্টার শামীম আহমেদ জানান, গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন রাতে কুয়াশা পড়ছে। রাত ১২টার পর নৌ পথে কুয়াশা শুরু হয়। রাত ২টার পর তীব্র হয় কুয়াশা। যা সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের মাস্টার মো. আলম বলেন, ঘন কুয়াশায় নদীতে নিরাপদে চলাচলের জন্য তাদের রাডার এবং ফগার লাইট সহ অন্যান্য সরঞ্জাম আছে। রাতে নৌযানগুলোকে নিজ নিজ ডানপাশ হয়ে চলাচলের কথা। আবার কুয়শার ঘনত্ব দৃষ্টিসীমার নিচে হলে পথিমধ্যে নৌযানগুলো নোঙ্গর করে রাখার কথা। কিন্তু কোনো কোনো লঞ্চ এবং মালবাহী জাহাজ এই নিয়ম মানছে না। এ কারণে তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক (বন্দর) মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে সব ঘন কুয়াশার কারণে। লঞ্চগুলো গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার আগে নদী বন্দরে তাদের কুয়াশার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ঘন কুয়াশা হলে নৌযানগুলোকে পথিমধ্যে নোঙ্গর করে রাখতে বলা হয়। কিন্তু যাত্রীদের চাপে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ঘন কুয়াশার মধ্যেও গন্তব্যে যেতে থাকে। এ কারণে তারা দুর্ঘটনায় পড়ছে। দুর্ঘটনা রোধে নৌপথের নিয়ম মেনে নৌ যান চলাচলের জন্য নৌযান মাস্টার ও সুকানীদের প্রতি আহ্বান জানান বরিশাল নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত