সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখে গেছে এখনো তার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব নিয়ে আজকের বাংলাদেশ বিচারহীনতার বাংলাদেশ হতে পারে না। শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার নির্দেশে সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫০ মাস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও লুটপাট এখনো বন্ধ হয়নি। মাফিয়া ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের মানুষের রক্ত শুষে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে লুটের টাকায় সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আমরা এই খুনী পরিবারের সকল সহযোগীদের বিচার চাই।’
সরকারের সমালোচনা করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমেছিল তাদের সে আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হয়নি। মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক শ্রেণির লোক প্রতিনিয়ত মব তৈরি করে ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করছে। গত এক বছরে শতাধিক মাজার-খানকায় হামলা হয়েছে, মন্দির-মসজিদে হামলা হয়েছে, বাউলদের মেলা-আশ্রমে হামলা হয়েছে, নারীর উপরে হামলা হয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম রক্ষার নামে এমন বর্বরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার কথায় একদিকে মানুষ হতাশ হচ্ছে, অন্যদিকে মব তৈরিতে এক শ্রেণির জনতা উৎসাহিত হচ্ছে। এ সরকারের এক বছর অতিবাহিত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কার্যক্রমে পূর্বের শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিকতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, কবি সাংবাদিক হালিম আজাদ, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি শীবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন ও ন্যাপ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ