শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশেষ শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষ শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার আয়োজন

বেলুন উড়িয়ে গতকাল বিশেষ শিশুদের নিয়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ন্যাশন চাইল্ডদের পাশে সমাজের সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ও ন্যাশন চাইল্ড ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াশা সোবহান   নাবিলা। গতকাল ‘উইন্টার ক্যাম্প ২০১৫ উইথ ন্যাশন চাইল্ড’-এর উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশেষ শিশুদের (অটিস্টিক) ন্যাশন চাইল্ড উল্লেখ করে দেশের সর্বোচ্চ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এ ক্যাম্পের আয়োজন করে। এ আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল বসুন্ধরা পেপার মিলস্ লিমিটেড ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সুইড বাংলাদেশ। এ আয়োজনে অংশ নিতে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক ‘আই’র মাঠে ন্যাশন চাইল্ডরা জড়ো হতে থাকে। ঢাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে ১৫৫ জন ন্যাশন চাইল্ড এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সকাল ১০টায় ন্যাশন চাইল্ড ক্যাম্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াশা সোবহান। এ উপলক্ষে বেলুন ওড়ান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ইয়াশা সোবহানসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা বেগম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (বিডিজি) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, ভাইস চেয়ারম্যান দিলারা মোস্তাফা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহীউদ্দীন, পরিচালক রাবেয়া মেহের মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সুইড বাংলাদেশের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, ডেপুটি ডিরেক্টর (স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল) কাজী বিলকিস বেগম প্রমুখ। এরপর কেক কাটায় অংশ নেয় শিশুরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ইয়াশা সোবহান বলেন, ন্যাশন চাইল্ড ক্যাম্পের যাত্রা শুরু হলো। এ ক্যাম্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। এ ন্যাশন চাইল্ডদের বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। আসুন আমরা এসব শিশুর পাশে দাঁড়াই। তিনি আরও বলেন, এই শিশুদের নিয়ে প্রথম পদক্ষেপ আমার এ আয়োজন। এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই আমি। তিনি শিশুদের স্বার্থে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সবার দোয়া প্রার্থনা করেন। অনুষ্ঠানে ন্যাশন চাইল্ডের ওয়েবসাইট (www.bgnationchild.com) এবং ফেসবুক পেজ-এর লোগো উন্মোচন করেন ইয়াশা সোবহান।

অনুষ্ঠানে আফরোজা বেগম বলেন, ন্যাশন চাইল্ডদের নিয়ে সব আয়োজনে বসুন্ধরা গ্রুপ পাশে থাকবে। এই শিশুরা যাতে পড়ালেখা, খেলাধুলাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারে, সে জন্য তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে দিলারা মোস্তাফা বলেন, এসব শিশুর স্বার্থে দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়ে তাদের পিতা-মাতা যেন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, সে জন্য তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন তার বক্তব্যে ন্যাশন চাইল্ডদের নিয়ে ব্যতিক্রমী ও উদ্যোগী আয়োজনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অভিনন্দন জানান। শিশুদের দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে উত্সবের সূচনা হয়। পরে হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ১০টি ইভেন্টে সুইড বাংলাদেশের ১১টি শাখার ১৫৫ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে নাচের প্রতিযোগী সাদিয়া আফরিন তিশার মা নার্গিস নাহার বলেন, ‘আমার মেয়ে বুদ্ধিতে একটু কম। আর বাকি সব কিছুতে এত সুনিপুণ যে কেউ প্রথম দেখায় তাকে বিশেষ শিশু হিসেবে বুঝতে পারবে না। তিশা ভালো নাচে, ভালো গায়। শুধু নাচে এ পর্যন্ত ছয়টি পুরস্কার পেয়েছে সে।’ তিনি বলেন, ‘তবে বসুন্ধরা গ্রুপের এমন আয়োজনে এসে আমার মেয়েকে আগের চেয়ে অনেক উচ্ছল মনে হয়েছে। এমন আয়োজন সব সময় করা হলে ওদের জন্য ভালো হবে।’

আরেক প্রতিযোগী তানভীর পুরোপুরি মায়ের বাধ্য ছেলে। মায়ের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। শুধু ঢোলের আওয়াজ শুনলে তাকে আর আটকানো যায় না। বাদ্যের তালে তালে খুব ভালো নাচে তানভীর। এ কারণে শুধু দেশে নয়, বিদেশ থেকেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে সে। তানভীরের মা শামীমা আফরোজ বলেন, ‘আমার ছেলের বুদ্ধি একটু কম। তবে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমি আশাবাদী একসময় আমার ছেলে খুব ভালো একজন নৃত্যশিল্পী হবে।’

বিশেষ শিশুদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে সালেহীন কবির কৌশিক। কৌশিক দেশের অন্যতম সেরা দৌড়বিদ হবে বলে মনে করেন মা নার্গিস সুলতানা কাজল। তিনি বলেন, ‘বিশেষ শিশুদের এমন আয়োজন সব সময় করা হলে তারা আরও ভালো করতে পারবে। কারণ শিশুরা কাজের মধ্যে থাকলে তাদের পক্ষে অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করা সম্ভব হয়। তবে এসব শিশুর জন্য এমন সুযোগ-সুবিধা খুব কম। এদের সত্যিকারে নার্সিং করা হলে এরা দেশের বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত হবে।’

বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় ক্রীড়া উত্সবের পুরস্কার বিতরণী। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা বেগম ও পরিচালক ইয়াশা সোবহান। এ সময় আফরোজা বেগম বলেন, ‘ন্যাশন চাইল্ডের সঙ্গে এটা আমার প্রথম পরিচয়। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় তোমাদের পাশে থাকবে। তোমরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক এগিয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আবারও বলছি, আমরা পাশে থেকে তোমাদের সহযোগিতা করব।’

ক্রীড়া উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডিজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহীউদ্দীন, পরিচালক রাবেয়া মেহের মাহমুদ, সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, উপপরিচালক কাজী বিলকিস বেগম প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর