শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলছে

এশিয়ান হাইওয়েতে নতুন সম্ভাবনা

সিলেটে জরিপ কার্যক্রম শুরু

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এশিয়ান হাইওয়েতে নতুন সম্ভাবনা

সিলেট-তামাবিল মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প গ্রহণ, সুতারকান্দি-সিলেট সড়কটিও যুক্ত করতে শুরু হয়েছে জরিপ

শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া সিলেটে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে এশিয়ান হাইওয়ে। সিলেটের দুটি সড়ক এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এখানকার অর্থনীতি ও সড়ক যোগাযোগে, সৃষ্টি হবে দেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগের সুযোগ-  এমনটাই মনে করছেন সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করতে ইতিমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুতারকান্দি-সিলেট সড়কটিও এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করতে শুরু হয়েছে জরিপকাজ। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে সিলেট-তামাবিল সড়ক ছয় লেনে (দুটি সার্ভিস লেনসহ) উন্নীতকরণের লক্ষ্যে গত বছরের শেষ দিকে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। শিল্প ও বাণিজ্য গতিশীল করতে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জোরদারের লক্ষ্যে ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প’ হিসেবে এটি হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হিসেবে নরসিংদীর কাঁচপুর থেকে সিলেটের শেরপুর হয়ে তামাবিল দিয়ে এই সড়কটি যুক্ত হবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। এই সড়ক ছাড়াও এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে শেওলা-চারখাই-সিলেট সড়কটি। ভারতের সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে হাইওয়েটি প্রবেশ করবে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা দিয়ে। এরপর সড়কটি (সার্ভিস দুই লেনসহ ছয় লেন সড়ক) চারখাই, গোলাপগঞ্জ হয়ে সিলেট নগরীর কিনব্রিজ পর্যন্ত আসার কথা। সেখান থেকে এশিয়ান হাইওয়ে চন্ডীপুল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত যাবে- এমন নকশা প্রণয়ন করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। গত মার্চ মাস থেকে এই সড়কটির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং টেকনিক্যাল ও সোশ্যাল স্টাডি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সওজের একটি দল শেওলা-সিলেট বর্তমান আঞ্চলিক সড়কটি মাপজোখ করে গেছে। তবে সূত্র জানিয়েছে, এই সড়কের মানচিত্রে শেষ পর্যন্ত কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। যানজট এড়াতে সড়কটি কিনব্রিজ পর্যন্ত না এসে দক্ষিণ সুরমার শ্রীরামপুর থেকে পারাইরচক বাইপাস হয়ে বর্তমান সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সিলেটের শেওলা থেকে নরসিংদীর কাঁচপুর পর্যন্ত এই হাইওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ কিলোমিটার হতে পারে বলে সওজ সূত্র জানিয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শেওলা-সিলেট-কাঁচপুর এশিয়ান হাইওয়ের প্রকল্প সওজের ঢাকা অফিস থেকে তদারকি করা হচ্ছে। হাইওয়েটি বাস্তবায়ন করতে হলে কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকের সংখ্যা, স্থাপনার সংখ্যা এসব বিষয়ে জরিপ চলছে। অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারেও জরিপ কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রম শেষ হলে হাইওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সিলেট-তামাবিল ও সিলেট-শেওলা সড়ক যুক্ত করার আগে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনের কাজ শেষ করতে হবে। এদিকে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সড়ক দুটি যুক্ত হলে তা সিলেটের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন তারা। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজ হলে ‘সেভেন সিস্টার’ খ্যাত ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য রপ্তানির আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারের সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এশিয়ান হাইওয়ে সবচেয়ে বেশি সুফল নিয়ে আসতে পারে সিলেটের শিল্পায়নে। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারতের সেভেন সিস্টারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সিলেটে গড়ে উঠতে পারে শিল্প-কারখানা। বিশেষ করে সিলেটে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক এবং প্রস্তাবিত সিলেট ইকোনমিক জোন ও শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে সেখানে দেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগে গড়ে উঠবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহার করে এসব ইকোনমিক জোনে উৎপাদিত পণ্য সহজেই সার্কভুক্ত দেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সিলেট যুক্ত হলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের কানেকটিভিটি বাড়বে। সিলেটে কাঁচামালের সহজলভ্যতা, পুঁজি ও বিনিয়োগে আগ্রহী উদ্যোক্তা থাকা সত্ত্বেও এত দিন আমরা যোগাযোগব্যবস্থার কারণে শিল্পায়নে পিছিয়ে ছিলাম। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে পারলে এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি পর্যটনশিল্পের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগানো যাবে। এ ছাড়া সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সাতটি রাজ্যের বিপুলসংখ্যক রোগী ও শিক্ষার্থী পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর