বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
সংসদে বিএনপি এমপি হারুন

মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা শনাক্তের কিটের অনুমোদন দিতে দেরি হওয়ায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘আজকে যদি আমরা গণস্বাস্থ্যের স্বল্পমূল্যের কিটটির অনুমোদন দিতে পারতাম, তাহলে এত দিনে এটা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা অনুমোদন তো দূরের কথা, এটির প্রয়োজন আছে কি না তা-ই বলতে পারছি না। আজকে কভিডে আক্রান্ত হলে আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা হয় সিএমএইচে যাচ্ছেন, না হয় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন না, মাননীয় স্পিকার। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে আমি বলব, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা গত ১০-১২ বছরে সম্পূর্ণভাবে ভারতনির্ভর হয়ে গেছে।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের তৃতীয় দিনে সোমবার ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির এই এমপি সরকারদলীয় সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে করোনা চিকিৎসা চালু করতে পারলেন না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি কিট উদ্ভাবন করল, আপনারা সেটার অনুমোদনটাও দিতে পারলেন না। অনুমোদন তো দূরে থাক, এত দিনেও বলতে পারলেন না এটার প্রয়োজন আছে কি নাই। আজকে যদি আমরা এই স্বল্পমূল্যের কিটটির সত্যিকার অর্থে অনুমোদন দিতে পারতাম, তাহলে এত দিনে এটা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারতাম।’ এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের একটি কিট উদ্ভাবন করতে পারে, আজকে আমাদের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা বা অভিজ্ঞ গবেষকরা (কী করছেন?)... আজকে সেখানে কী কাজ হচ্ছে মাননীয় স্পিকার?’

বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আজকে কভিডে আক্রান্ত হলে আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা হয় সিএমএইচে যাচ্ছেন, না হয় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন না, মাননীয় স্পিকার। এটা বাস্তবতা। এটা আমি সরকারের সমালোচনা করার জন্য বলছি না। এটা একেবারেই বাস্তবতা। সুতরাং আজকে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে একেবারেই ভঙ্গুর, একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে, এটাই এর প্রমাণ। আজকে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিঃসন্দেহে আমি বলব গত ১০-১২ বছরে সম্পূর্ণভাবে ভারতনির্ভর, ভারতমুখী হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে কোটির অধিক মানুষ চিকিৎসার জন্য শুধু ভারতে গমন করেছেন। এটা বাস্তব, এটা সত্য ঘটনা মাননীয় স্পিকার। এ সত্যটুকু তুলে ধরার জন্য আজকে সংসদে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সমালোচনার বিষয় না। আজকে এই বিষয়টিকে কীভাবে সমাধান করব, কীভাবে মোকাবিলা করব- এ জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।’ হারুনুর রশিদ বলেন, এ জন্য সরকারি উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করতে হবে। সরকারি উন্নয়ন ব্যয় হ্রাস করে মানুষের জীবন-জীবিকার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে যেসব খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার, সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

বাজেটের সমালোচনা করে বিএনপির এই এমপি বলেন, ‘আজকে ব্যয় এবং আয়ের বিশাল যে বাজেট দিয়েছেন, এখানে দেখা যাচ্ছে সরকার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ইজ ইট পসিবল?’ তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি এখানে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আপনি এখানে ঘাটতি দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। মাননীয় স্পিকার, এটা কি সম্ভব? এ কারণে আজকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা ও যৌক্তিকতা নেই। এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চরম অসঙ্গতি বিদ্যমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের যে সংকট, এটা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আয়ের থেকে তো আমাদের ব্যয় বাড়ানোর দরকার নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর