মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন লঘু অপরাধীরা

কমবে মামলাজট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

আপসযোগ্য একটি মামলায় আদালতের রায়ে এক বছর জেল হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ৭০ বছর বয়সী আমির উদ্দিনের। সারা জীবনে এই প্রথম তিনি দন্ডিত হয়েছেন। অপরাধ ও বয়স বিবেচনায় আদালত তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। এই সময়ে তিনি শিখেছেন স্বাক্ষর করা, পেয়েছেন বয়স্কভাতাও। শুধু আমির উদ্দিন নন, রাজশাহীর আদালত থেকে অন্তত ২৩ জন আসামি প্রবেশনের সুবিধা পেয়েছেন; যা এখন পর্যন্ত সারা দেশে জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে রেকর্ড। মামলার রায়ে কারাদন্ড হলেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাইরে। জেলে যেতে হচ্ছে না। বাড়িতেই সাজা খাটছেন। প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অধ্যাদেশ অনুযায়ী আদালতের নির্দেশেই এমন সুবিধা পাচ্ছেন লঘু অপরাধীরা। এ ধরনের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সারা দেশে এখন রোল মডেল রাজশাহী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ আইনটি প্রয়োগের ফলে আদালতে মামলার জট ও কারাগারে বন্দীর চাপ কমবে। প্রবেশনে ছাড়া পাওয়া আমির উদ্দিন জানান, আদালতের মাধ্যমে তিনি বাড়িতে থেকে সাজা খাটার সুযোগ পেয়েছেন। এই সময়ে তিনি আদালতের হস্তক্ষেপে বয়স্কভাতারও কার্ড পেয়েছেন। এ ছাড়া বাড়িতে বসে স্বাক্ষর করা শিখেছেন।

 প্রবেশনে ছাড়া পাওয়া গোলাম রাব্বানী জানান, তিনি যে ঘটনায় সাজা পেয়েছিলেন, তার জন্য অনুতপ্ত। আদালত তাকে যে সুযোগ দিয়েছে তা তিনি শতভাগ কাজে লাগাবেন। আর কোনো দিন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়াবেন না। এই সময়ে তিনি বৃক্ষরোপণ ও বয়স্কদের শিক্ষায় ব্যস্ত থাকবেন। বাদী ও আসামিদের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা। এর ফলে আদালতে কমছে মামলার জট। আর কারাগারেও কমছে বন্দীর সংখ্যা। রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আহমেদ জানান, এমন সুযোগ পাওয়ায় ভবিষ্যতে তারা আর অপরাধে নিজেদের যুক্ত করবে না। যেহেতু সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালত এ সুযোগটি দিচ্ছে। রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, এটি দ- পাওয়া ব্যক্তির প্রথম অপরাধ কিনা, তার সামাজিক অবস্থান উল্লেখ করে তারা আদালতে প্রতিবেদন দেন। আদালত সবকিছু বিবেচনা করে দন্ড পাওয়া ব্যক্তিকে সুযোগ দিয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাগারে বহু অপরাধী থাকে। তার মধ্যে লঘু অপরাধীদের রাখা হলে সে বড় অপরাধী হিসেবে বের হয়ে আসতে পারে। তাই এমন সুযোগ দেওয়া ইতিবাচক। রাজশাহী বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, লঘু অপরাধীদের প্রবেশনে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া ইতিবাচক। উন্নত বিশ্বে এমন সুযোগ চালু আছে। সরকার যে উদ্যোগটি নিয়েছে, এর ফলে একদিকে অপরাধী যেমন কমবে, তেমন অপরাধের মানসিকতাও কমে আসবে। প্রবেশন সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য আদালত কিছু শর্ত দেয়। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে সাজা খাটতে যেতে হবে কারাগারে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর