মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ

প্রতিবন্ধী যুবককে নিজেদের সন্তান দাবি দুই পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরের মিঠাপুকুরে বাক, শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক যুবককে নিজেদের সন্তান দাবি করেছে দুটি পরিবার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে উত্তেজনার ফলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বৈধ অভিভাবককে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রবিবার রাতে মিঠাপুকুর থানার প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকালে প্রতিবন্ধী ওই যুবককে মিঠাপুকুর আমলি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জানা গেছে, দুই পরিবারের সন্তান দাবি করা ওই যুবকের নাম-ঠিকানা দুই রকম। এক পরিবারের দাবি অনুযায়ী তার নাম মো. নাহিদ (২৬), বাবা ফজলু মিয়া, মা লালমাই বেগম। গ্রামের বাড়ি লতিবপুর ইউনিয়নের রশিদপুর। অন্য পরিবারের দাবি- যুবকের নাম লিটন মিয়া (২২), বাবা মো. ওয়াহেদ আলী, মা নিলুফা বেগম। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রাম তাদের। পুলিশ জানায়, মিঠাপুকুর উপজেলার রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ফজলু মিয়া অভিযোগ করেন, তার প্রতিবন্ধী ছেলে নাহিদ চার বছর আগে উপজেলা সদর থেকে হারিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে ঢাকার আশুলিয়ায় সন্ধান পান তারা। সেখানে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছে বলে জানান ফজলু-লালমাই দম্পতি। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ওই যুবককে উদ্ধার করে মিঠাপুকুর থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় গাইবান্ধার ওয়াহেদ-নিলুফা দম্পতি থানায় এসে ওই যুবক তাদের সন্তান দাবি করেন।

ফজলু-লালমাই দম্পতি বলেন, ‘চার বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে মিঠাপুকুর সদরে গিয়ে হারিয়ে যায় নাহিদ। পরে ঢাকার আশুলিয়ায় সন্তানকে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখি। প্রতারক চক্র ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ভিকুকের পেশায় নামিয়েছে। তাকে দিয়ে টাকা আয় করছে। এ জন্য আমাদের কাছে ফেরত দিচ্ছে না।’ অন্যদিকে, ওয়াহেদ-নিলুফা দম্পতি বলেন, ‘সন্তান আমাদেরই। ওর নাম লিটন। ওর নামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী কার্ড রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ভাতার টাকা উঠাই।’ এভাবে দুই পরিবারই সন্তানের সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেন। কিন্তু কেউ ছাড় দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে থানার প্রধান ফটকের সামনে ফজলুর পক্ষের শত শত মানুষ জড়ো হয়ে সন্তান ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভকারীদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু সন্তান ছেড়ে কিছুতেই তারা বাড়ি ফিরতে রাজি হননি। পরে ওসি আমিরুজ্জামান ও লতিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মন্ডল ঘোষণা দেন, সন্তান দাবি করা দুই বাবা-মা এবং প্রতিবন্ধী ওই যুবকের আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করানো হবে। টেস্ট রিপোর্ট যাদের পক্ষে আসবে তাদের কাছে সন্তান ফেরত দেওয়া হবে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী যুবকটিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ টেস্টসহ পরবর্তী কার্যক্রম আদালত গ্রহণ করবে। একটি জিডির ওপর ভিত্তি করে যুবকটিকে উদ্ধার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর