সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ

মোস্তফা মতিহার

বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ

আজ অমর একুশে বইমেলার শেষ দিন। কাল মঙ্গলবার থেকে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবেন না কোনো দোকানি।

বিগত বছরগুলোতে মেলায় ভাঙনের ফলে বিষাদের সুর বেজে উঠলেও প্রকাশকদের মতে, এবার বিষাদের সুরের বদলে থাকবে আনন্দের উচ্ছ্বাস। কারণ দিন যতই যাচ্ছিল প্রকাশকরা ততই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। তাই প্রকাশকরাও চান যত আগে মেলা শেষ হয় ততই তাদের জন্য কল্যাণকর। প্রতিবাদের মুখে পাওয়া এবারের মেলা প্রকাশকদের জন্য ছিল গলার কাঁটা। করোনার কারণে মেলার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার পর বড় ধরনের লোকসান এড়াতে প্রকাশকরা চেয়েছিলেন মেলা যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলা একাডেমি মেলা বন্ধ না করাতে মেলায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রকাশক পথে বসেছেন- এমন মন্তব্য এবারের মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় সব প্রকাশকের।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ থেকে অনেক প্রকাশকই তাদের বই সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন। মেলা শেষ হওয়ার আগেই বই সরিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে টাঙ্গন প্রকাশনীর অজয় রায় বলেন, কী রকম বিক্রি হবে তা তো পুরো মাসেই বুঝলাম। এতদিন যাতে বিক্রি হয়নি, একদিনে আর কিইবা বিক্রি হবে। তার কথার সূত্র ধরে মা সেরা প্রকাশনীর দেওয়ান মাসুদা সুলতানা বলেন, প্রতিদিনই অলস সময় কাটাচ্ছি। অতএব একদিন আগেই সব সরিয়ে নেওয়া ভালো বলেই মনে করছি।

 

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এত মন্দা মেলা আর দেখিনি। করোনা পরিস্থিতিতে সব কিছুই যখন মন্দা তখন মেলা থেকে ভালো কিছু আশা করাটাও ভুল। আগামী বছরের মেলা রঙিন হোক ও সফলতা বয়ে আনুক সবার জন্য এটাই আমি চাই।

এদিকে গতকাল মেলার ২৫তম দিনটিও ছিল বইপ্রেমীশূন্য। হাতে গোনা যে কয়জন এসেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ব্যস্ত ছিলেন সেলফি তোলা, ঘোরাঘুরি ও ছবি আঁকিয়েদের দ্বারা নিজেদের স্কেচ অঙ্কনে।

ক্ষতিপূরণ দাবি : এবারের মেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পাবলিশার্স ফোরাম কাঁটাবন সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। ফোরামের সম্পাদক দেলোয়ার হাসান স্বাক্ষরিত অর্ধশতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যের একটি তালিকা গতকাল বাংলা একাডেমির কাছে প্রদান করে। ফোরামের পক্ষে সম্পাদক দেলোয়ার হাসান বলেন, সরকার আমাদেরকে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলেও আমাদের কাছ থেকে যদি কিছু বই কিনে নেয় তাহলে আমরা লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব। প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার বই যদি সরকার কিনে নেয় তাহলে আমরা পথে বসা থেকে বেঁচে যাব। এই সামান্য টাকার বই কেনা সরকারের কাছে অসম্ভবের কিছু না। এতে আমরা পাবলিশার্স ফোরাম কাঁটাবনের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসানের ‘ভাস্কর্য রাজনীতি’ : পাঠক সমাবেশে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের নেতা হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসানের ‘ভাস্কর্য রাজনীতি’ বইটি। বইটিতে ভাস্কর্যের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভাস্কর্যের ছবিও বইটিতে স্থান পেয়েছে। মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম মিঠুর প্রচ্ছদে ৭২ পৃষ্ঠার সচিত্র এই বইটির দাম ২২০ টাকা।

আরিফুর রহমান দোলনের ‘মায়াবী স্পর্শ’ : এই সময় পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে আরিফুর রহমান দোলনের উপন্যাস ‘মায়াবী স্পর্শ’। বইটি পাঠকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিনোদনের পাশাপাশি বইটিতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে বলেও জানান উপন্যাসটির লেখক। সব্যসাচী হাজরার প্রচ্ছদে ১৫৭ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম ৩২০ টাকা।

নতুন বই : গতকাল মেলার ২৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ৪৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- গতি প্রকাশনী এনেছে আবুল কাশেম সম্পাদিত ইতিহাসের বই ‘মুক্তিসংগ্রামে আওয়ামী লীগ দালিলিক ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১, শোভা প্রকাশ এনেছে আবুল আহসান চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘আনিসুজ্জামান : কালের সমীক্ষা’, পাঠক সমাবেশ এনেছে আমিনুল ইসলাম ভূইয়া অনূদিত দর্শনের বই ‘প্লেটোর চারটি সংলাপ’, বিভাস এনেছে ইকবাল হাসান তপু সম্পাদিত প্রবন্ধের বই ‘বিচারপতি ওবায়দুল হাসান : ইতিহাসের পথ বেয়ে ঐতিহ্যময়’, ইত্যাদি। গত ২৫ দিনে মোট বই প্রকাশ হয়েছে ২ হাজার ৫৭৬টি। এর মধ্যে গল্পের বই ৩৩৩টি,  উপন্যাস           ৪০১টি, প্রবন্ধ ১৫০টি, কবিতা ৮৬৯টি, গবেষণা ৪৭টি, ছড়া ৪৮টি, শিশুতোষ ৪১টি, জীবনী ৮১টি, রচনাবলি ১৬টি, মুক্তিযুদ্ধ ৮০টি, নাটক ১২টি, বিজ্ঞান ৪২টি, ভ্রমণ ৩৪টি, ইতিহাস ৬০টি, রাজনীতি ১৬টি, চিকিৎসাবিষয়ক ১২টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ৫১টি, রম্য/ধাঁধা ১৪টি,        ধর্মীয় ৩৫টি, অনুবাদ ৩০টি সায়েন্স ফিকশন ২১টি ও অন্যান্য ১৮৩টি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর