নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১০ গ্রামের মানুষের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম হানজালা বাহিনী। বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমিজমা বিক্রিসহ সব কাজেই হানজালা বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। না দিলেই গুম, খুন, হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে থাকে এ বাহিনী। এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারছে না প্রশাসন। শুধু তা-ই নয়, বছরখানেক আগেও হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটে নেয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে হানজালাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে হানজালা পার পেয়ে যায়। এদিকে শনিবার বিকালে হকার উচ্ছেদ ইস্যু ও বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা করায় পুলিশের ওপর হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানজালাসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। রবিবার সকালে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্র্শক (এসআই) মিন্টু বৈদা বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হানজালা ওরফে হামজালা, ফাহিম, সফিউদ্দিন, সোহাগ, মেহেদী, নাসিম ওসমান, ফাহিম, নয়ন, দ্বীপ, বাসির, আমিনুল, নাহিদ, আল-আমিন, কবির, ওবায়দুর, আরিয়ান, ইমন, রবিউল, মফিজুল, মুইরাব, মোশারফ, আল-আমিন, ইসমাইল ও হাসান। এ ঘটনায় বাসির নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার বাসির উপজেলার গুতিয়াবো এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে। মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ আগে ভুলতা এলাকায় গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাথ দখলমুক্ত করে পুলিশ। শনিবার বিকালে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হানজালা ওরফে হামজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আফজাল হোসেন নামে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি গোলাকান্দাইল গোলচত্বর এলাকা হয়ে ভুলতা ফাঁড়ির সামনে এসে পৌঁছালে হানজালা ও তাদের বাহিনীর সদস্যদের কাছে বিক্ষোভ মিছিলের কারণ জিজ্ঞাসা করেন ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিন। মিছিলের কারণ জিজ্ঞেস করায় হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিনকে হুমকি-ধমকি দেয়। এ সময় হানজালা ও তার সহযোগীরা ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিনকে গালিগালাজ করতে করতে হুমকি দিয়ে বলে, ‘আপনি ফুটপাথের দোকানপাট বন্ধ করে ভালো করেননি। আপনি ফুটপাথের দোকানপাট বন্ধ করতে পারবেন না। জোর করে হলেও ফুটপাথ চলবে। আপনি পারলে ঠেকাবেন।’ এর আগে ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনকে হুমকি-ধমকি প্রদান করে হানজালা। পরে হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুলতা ফাঁড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে রিপন ও কবির নামে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে জখম করে। তাদের স্থানীয় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হানজালার নামে রূপগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাফ ডজন মামলা রয়েছে। এর আগেও গত বছর হানজালার নামে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, গত বছর হানজালার নামে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। এ ছাড়া হানজালার নামে একাধিক মামলা থাকার পরও প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতার করলেও প্রভাবশালী মহলের ফোনে তাকে ছেড়ে দিতে হয়। হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। ভুলতা ও বলায়খা এলাকার ১০টি গ্রামের মানুষ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। তাদের চাঁদা দেওয়া ছাড়া কেউ এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারে না। হানজালা তার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ভুলতা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে হানজালা ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করা হবে।