চট্টগ্রামে প্রতারণার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। কখনো সরকারি অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে, কখনো কথিত বিয়ে করে যৌতুক মামলা ও হুমকি দিয়ে আত্মসাৎ করা হচ্ছে অর্থ। কখনো বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ উঠছে কিছু নারীর বিরুদ্ধে। মাঝেমধ্যে অভিযানে কিছু প্রতারককে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা গ্রেফতার করলেও বেশির ভাগই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অপরাধে নারীদের ব্যবহার নিয়ে অপরাধবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। নারীদের সামনে রেখে অপরাধ করার কারণে ভিকটিম প্রতারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারে না প্রতারণার বিষয়টি। অপরাধ সফল করার কৌশল হিসেবে নারীদের সামনে রেখে প্রতারণা করা হচ্ছে।’
নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা নিয়ে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘নারীদের মাধ্যমে ভিকটিমকে সহজে মটিভেটেড করা যায়। তারা কোনো কথা বললে সহজে যে-কেউ বিশ্বাস করে। তাই অপরাধ করার প্রক্রিয়া সহজতর করতে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।’চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার ফারুক উল হক বলেন, ‘তদন্তের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০টি অভিযোগ আসে। যার মধ্যে প্রতারণার অভিযোগও থাকে। প্রতারণার অভিযোগগুলোয় বাদী ও বিবাদী হিসেবে অনেক নারীই থাকেন।’
জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রতারক চক্রের পুরুষ সদস্যরা নেপথ্যে থেকে নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা অনলাইন-অফলাইনে নিত্যনতুন কৌশলে করছেন একের পর এক প্রতারণা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানের মুখে মাঝেমধ্যে কিছু প্রতারক গ্রেফতার হলেও সিংহভাগই থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারি অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ২৩ নভেম্বর জান্নাতুল নাঈমা নামে কথিত এক এনজিওর প্রধান নির্বাহীকে গ্রেফতার করেছে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। প্রবাসীদের সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে নাছমিন আকতার সিমু নামে এক নারীকে ২৯ সেপ্টেম্বর কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। ঘটক ও পাত্রী সেজে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ২৪ জুন রাউজান থেকে গ্রেফতার করা হয় সেলিনা আকতার শিরিন ও তার স্বামী ওকার উদ্দিন আরিফকে। নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভয়ংকর প্রতারক চক্রের হোতা সুলতানা হীরা ওরফে সোনিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাসায় ডেকে এনে অশ্লীল ছবি তুলে প্রতারণার অভিযোগে ২২ এপ্রিল পুলিশ নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে লক্ষ্মী রানী দাশ, নার্গিস আকতারসহ তিনজনকে।
একটি প্রতারণার মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, সিমু নামে এক নারীর বিরুদ্ধে ফেসবুক, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এ নারীর রয়েছে চারটি পরিচয়পত্র। এ পরিচয়পত্র দিয়ে তিনজনকে বিয়েও করেছেন তিনি। পরে একজন ভুক্তভোগী এ-সংক্রান্ত একটি মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।