বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সাপের কামড়ে অপচিকিৎসা চট্টগ্রামে বাড়ছে বিপদ

চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার এক তরুণীকে সাপে কামড়ায়। পরে যান এক সাপুড়ের কাছে। সাপুড়ে ব্লেড দিয়ে কেটে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে সাপের বিষ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ততক্ষণে তরুণীর অবস্থা বেহাল। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা দিলে সুস্থ হন ওই তরুণী। এভাবে সাপের কামড়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। কেউ জেনে-বুঝে, কেউ না বুঝে সাপুড়ের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে সাপের বিষ দ্রুত শরীরে ছড়াচ্ছে। বিষ কমার বিপরীতে উল্টো পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ে বিপদ। চমেক হাসপাতালে প্রতি মাসে শতাধিক সাপে কাটা রোগী আসে। চমেক হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা আরাফাত ইসলাম বলেন, সাপে কাটা রোগীর কোনো মতেই সাপুড়ে, ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসাই শ্রেয়। ওই তরুণীকে সাপুড়ে ব্লেড দিয়ে কেটে অবস্থা আরও খারাপ করে দেয়। তিনি বলেন, সাপে কামড় দিলে নড়াচড়া না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। নড়াচড়া বেশি করলে বিষ দ্রুত ছড়াবে। তাছাড়া, চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কিছু না খাওয়া, মলম বা মালিশ না লাগানো উচিত। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাপে কামড়ানো রোগী সুস্থ হয়ে যায়। জানা যায়, পৃথিবীজুড়ে বন্যা এবং বন্যা-পরবর্তীতে সর্পদংশনের হার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে সর্পদংশনে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার মানুষ মারা যায়। তাই বর্ষা মৌসুমে সাপের কামড়ের বিষয়টি সামনে আসে। সাপ সাধারণত মাটির গর্তে, পুকুরের পাড়ে, ঝোপঝাড়, শুকনো লাকড়ি বা কাঠের স্তূপের ফাঁকে  থাকতে পছন্দ করে। বর্ষায় গর্তে পানি উঠে যায়। ফলে সাপ ডাঙায়, শুকনো জায়গায় উঠে আসে। সেটা খেতের আইল, রাস্তা কিংবা আপনার ঘরের তোশকের তলা, বালিশের তলা, আলনার ভিতর, কাঠের বা কাপড়ের স্তূপ যে কোনো জায়গাতেই আসতে পারে। শহরে পাকা নালা, রাস্তার পাশের বা বাড়ির পেছনের ঝোপ এদের আবাস। বন্যার পানিতে এসব জায়গা ডুবে গেলে এবং খাদ্য সংকট হলে এরা উঁচু শুকনা জায়গা খুঁজে এবং মানুষের বাসা বা এর আশপাশে অবস্থান নেয়। ফলে এ সময় মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে সাপে দংশনের শিকার হলে সাপ ধরতে যাওয়া কোনো মতেই উচিত নয়। সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন, বর্ণ (গায়ের রং) এবং দৈর্ঘ্য (কতটুকু লম্বা), চিকিৎসার প্রয়োজনে এই সম্পর্কিত ধারণা রাখা দরকার।  বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাপ সাধারণত ভীতু। সাপ এমনিতে মানুষকে আক্রমণ করবে না।

মানুষ শব্দ করে হাঁটলে, লাঠি বা কোনো কিছুর আওয়াজ শুনলে সে বুঝে পালাতে চেষ্টা করে। তখন তাকে চলে যেতে দিতে হবে। রাতে বিছানা, এমনকি বালিশের তলাও চেক করা ভালো। আলনার ভিতরেও থাকতে পারে। শব্দ করে কাপড় নিলে সে নিজেই চলে যাবে। বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড় থাকলে কেটে পরিষ্কার রাখা উচিত। তাছাড়া ইঁদুরের গর্ত থাকলে ভরাট করা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর