ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে অর্থের জোগান আরও কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবীর। রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদহার আরও এক দফা বাড়ানোরও ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবীর। তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মূলত একটি ‘সংকোচনমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ জন্য বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হচ্ছে। যেমন টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ, পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নতুন করোনা প্রাদুর্ভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার চাপ ইত্যাদি।
লিখিত বক্তব্যে গভর্নর বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত স্তরে পৌঁছলেও মূল্যস্ফীতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিদ্যমান অতিরিক্ত তারল্য যাতে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টিতে সহায়ক হতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ইস্যু করে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য উত্তোলন করেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে টাকার অতিরিক্ত অবমূল্যায়ন রোধকল্পে নিয়মিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করা হচ্ছে। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের মতো ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ব্যাংকিং খাতের নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঋণাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ১২ দশমিক ১ শতাংশ এম২ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারি খাতে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ (১ হাজার ৬৩ বিলিয়ন টাকা) এবং বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধি করাসহ মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৮ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে মাঝে দুই বছর মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে, কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এবার আবার পুরনো রীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘টাকার অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক মান, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা’ হবে নতুন অর্থবছরের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ।