মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিম সংগ্রহে মহাবিপর্যয়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ডিম সংগ্রহে মহাবিপর্যয়

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী থেকে ২০২০ সালে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। কিন্তু ২০২১ সালে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল মাত্র ৮ হাজার ৫০০ কেজি এবং চলতি ২০২২ সালে চার দফায় ডিম সংগ্রহ করা হয় মাত্র সাড়ে ৭ হাজার কেজি। ২০২১ সালে ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করা হয় ১০৫ কেজি এবং এ বছর উৎপাদন করা ১২৫ কেজি। অতীতের চেয়ে গত দুবছর অনেক কম ডিমই সংগ্রহ করা হয়েছে। দূষণ, দখল  ও অত্যাচারে মা মাছ ইতিবাচক পরিবেশ না পাওয়ায় ক্রমেই ডিম কম ছাড়ছে। ফলে ভালো নেই হালদা নদী।                    

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে হালদা নদীর মাছের ডিম সংগ্রহের তথ্য সংরক্ষণ হয়ে আসছে। ২০০৭ সালে  সংগ্রহ করা হয় ২২ হাজার ৩১৪ কেজি, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৪০০ কেজি, ২০০৯ সালে ১৩ হাজার ২০০ কেজি, ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম), ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি, ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি এবং গত বছর ২০২১ সালে সংগ্রহ করা হয় সাড়ে ৮ হাজার কেজি। ডিম থেকে পোনা প্রক্রিয়ায় সরকারিভাবে হ্যাচারি আছে চারটি। বেসরকারি পর্যায়ে মাটির কুয়া আছে ১৭৬টি।  চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অতিমাত্রায় দূষণের কারণে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই গত দুই বছরে ডিম সংগ্রহ আশানুরূপ হয়নি। তবে এ বছর পোনা উৎপাদন ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কম ডিম থেকেও ভালো পোনা পাওয়া যায়। ডিম নষ্ট হয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু নিয়মিতই ডিম সংগ্রহ কমে যাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি এবং স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধির উদ্যোগে হালদা নদীকে দূষণের কবল থেকে রক্ষা করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় হালদা নদীকেও বুড়িগঙ্গার ভাগ্যবরণ করতে হবে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, এ বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ কম। কিন্তু ডিম থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেণু ফুটানো হয়েছে। হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে হলে নদীটিকে দখল-দূষণের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সব পক্ষকে নদীটির প্রতি আন্তরিক হতে হবে। কেবল সরকারি উদ্যোগে সব করা হবে-এমনটি আশা করা উচিত হবে না।      

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (সিডিএ) অন্যান্য আবাসিক এলাকার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার দূষিত বর্জ্য বামনশাহী, কুয়াইশ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে হালদা নদীতে। এর সঙ্গে আছে নদীর দুই পাড়ের কৃষি জমির কীটনাশক। আছে এতদাঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্যিক বর্জ্য। তাছাড়া, ফটিকছড়ি ভুজপুরের অপরিকল্পিত রাবার ড্যামের কারণেও দূষিত হচ্ছে হালদার পানি। এসব কারণে ক্রমেই দূষিত হচ্ছে হালদা। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মা মাছে। বিপর্যয় ঘটেছে ডিম সংগ্রহে।

     

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর