মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড

সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুল গ্রেফতার, পরিচয় গোপন করে যুক্ত ছিল প্রশ্ন ফাঁসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স-র‌্যাব। গত রবিবার রাতে রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। র‌্যাব বলছে, দেশে ফিরেই তিনি পরিচয় গোপন করে প্রশ্œ ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূত্রাপুর এলাকায় সরকারবিরোধী আইনজীবীদের এক মিছিলকে তাড়া করেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় তারা পথচারী লন্ড্রি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে সামনে পেয়ে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন। ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। স্পর্শকাতর হওয়ায় মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ২১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায় অনুযায়ী ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।

ওই দিন এ মামলার আট আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। বাকিরা ছিলেন পলাতক।

গতকাল দুপুরে র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি কামরুল শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করেছেন। আমরা নজরদারি বাড়াই। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়েই রবিবার রাতে চামেলীবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করি। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর নারায়ণপুরের মৃত আবদুুল কাইয়ুমের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুলের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে ধাওয়া করে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারপর তিনি জানতে পারেন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিৎ মারা গেছেন এবং এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। এরপরই তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের দুই মাস পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৪ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর সপরিবারে তারা গ্রামের বাড়ি চলে যান।

র‌্যাব জানায়, ২০১৩ সালের শেষদিকে বাংলাদেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন। এ সময় তিনি জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। প্রথমে তিনি ছদ্মনামে গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের প্রধান খোকন ও সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে বিভিন্ন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে ১০ লাখের বেশি টাকা উপার্জন করেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করেন। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কামরুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর