শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বৃষ্টি হলেই ডুবছে খুলনা

ধীরগতির ড্রেনেজ সংস্কারে ‘বুমেরাং’ * পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

বৃষ্টি হলেই ডুবছে খুলনা

মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি খুলনা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে। ছবি গতকাল তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বুধবার রাত ৩টা থেকে বৃষ্টি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই খুলনার গোবরচাকা, নবীনগর, সোনাডাঙ্গা ১ম ফেজ, নিরালা প্রান্তিকা ও মুজগুন্নি আবাসিকের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করে। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানেও মুজগুন্নি, গোবরচাকা, নবীনগর ও তালিমুল মিল্লাত মাদরাসা এলাকার বাড়ি ঘর, মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে ছিল। এতে এসব এলাকার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নগরীতে বৃষ্টির পানি নদীতে নামায় খালগুলো দখল করাসহ ধীরগতিতে ড্রেন-সড়ক সংস্কার কাজে ভোগান্তি বাড়ছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নির্মাণাধীন ড্রেনের বিভিন্ন স্থানে বালুর বস্তা দিয়ে আটকে রাখা ও ড্রেনে পেড়িমাটি, ময়লা-আবর্জনা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি করছে। সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার (১ম ফেজ) ৬নং রোডের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাত ৪টার দিকে হঠাৎ ঘরের মেঝেতে পানি ঢুকতে শুরু করে। মেঝেতে থাকা আসবাবপত্র, দামি  ল্যাফটপ, ফ্রিজ ও অন্য মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। নবীনগর এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম জানান, রাত ৪টা থেকেই ড্রেন উপচে ঘরের ভিতরে হাঁটু সমান পানি ঢুকেছে। সবাই মিলে পানি সেচে বের করার চেষ্টা করেছি। দিনের রান্নাবান্না বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বাসিন্দারা। জানা যায়, খুলনার ব্যস্ততম হাজী ইসমাইল রোডের ড্রেনেজ সংস্কার চলছে তিন মাস ধরে। সড়কের দুই প্রান্তে শেখপাড়া বটতলা মোড় থেকে ওজোপাডিকো স্কুল পর্যন্ত আংশিক ও বসুপাড়া কবরস্থান মোড় থেকে চশমা বাড়ি পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝে বিশাল অংশে ড্রেনের কাজ ধীর্ঘদিন বন্ধ রাখা রয়েছে। নির্মাণাধীন এই ড্রেনের পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারে না। একইভাবে পল্লীমঙ্গল গার্লস স্কুল ও কবি জসীমউদ্দীন কিন্ডারগার্টেনের সামনে ড্রেন বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে ঢালাই দিয়ে   সড়ক উঁচু করা হয়েছে। এখানে ড্রেন না থাকায় গোবরচাকা ও নবীনগর এলাকার পানি হাজি ইসমাইল রোডের ড্রেনে মিশতে পারে না। ফলে বৃষ্টি হলেই গোবরচাকা, নবীনগর, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা. তালিমুল মিল্লাত মাদরাসা এলাকার বিশাল অংশে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান জানান, অপরিকল্পিত ও ধীর গতির সংস্কার কাজে ৮২৩ কোটি টাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল মানুষ পাচ্ছে না। শহরজুড়ে সারাবছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখল হয়ে গেছে। সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, বর্তমানে রূপসা ও ভৈরব নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এখন নদী খনন করা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই  শহরের পানি নিষ্কাশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা যতই ড্রেন করি, ড্রেনের পানি তো যাবে রূপসা নদীতে। নদী ভরাট হয়ে উঁচু থাকায় নদী খনন করা ছাড়া বিকল্প নেই। জানা যায়, ফুলবাড়িগেট তেলিগাতি এলাকায় পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট করে অপরিকল্পিত উন্নয়নে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টিচার ট্রেনিং কলেজ, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানি থৈ থৈ করছে। অভ্যন্তরীণ চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে।

নিচতলার কক্ষে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত খুলনায় রেকর্ড ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর