রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দুই বছরেও শুরু হয়নি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সারা দেশে নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড় তোলা এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি এখনো। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন মামলার বাদী। আর বিচার বিলম্বিত হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। মামলার সব আসামি এখনো কারান্তরিন আছেন। তাদের সবাই সিলেটে ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণ ও স্বামীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়ের করা মামলা দুটির অভিযোগ গঠন হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণ ও চলতি বছরের মে মাসে চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলারই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি জানান, মামলার বাদী নির্যাতিতার স্বামী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে হাই কোর্টে রিট করেছেন। হাই কোর্ট ইতোমধ্যে একটি আদেশও দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, ‘মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বাদী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে হাই কোর্টে রিট করেন। হাই কোর্টের আদেশের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ জানা গেছে, মামলার বিচারিক কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দেওয়ায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য বাদী গত ১ আগস্ট হাই কোর্টে রিট করেন। গত ১৬ আগস্ট প্রাথমিক শুনানি শেষে ‘মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর প্রক্রিয়া গ্রহণে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না’- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাই কোর্ট। তবে এখনো হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

এদিকে, মামলার বিচার বিলম্বিত হওয়ায় ইতোমধ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রাইভেট কারযোগে নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যান দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের এক তরুণ। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন ক্যাডার তাদেরকে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী ছাত্রাবাসে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে আটকে রেখে প্রাইভেট কারের ভিতর তরুণী গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই ক্যাডাররা। পরে ওই দম্পতির কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে গাড়িটিও আটকে রাখা হয়। প্রাইভেট কার ছাড়িয়ে নিতে হলে চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় এমসি কলেজের ছাত্র সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল ইসলাম এবং তাদের বন্ধু তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ইসলাম ও মিছবাউল ইসলাম রাজনকে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র‌্যাব ও পুলিশ। তাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। গ্রেফতারের পর সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, রাজন ও আইনুল ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। আর রবিউল ও মাসুম স্বীকারোক্তি দেয় ধর্ষণে সহযোগিতা করার। গণধর্ষণের ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫২ জনকে। ঘটনার দুই মাস আট দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর