মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বরিশালে হঠাৎ বেড়েছে আত্মহত্যা

আড়াই বছরে ৪৫২ জনের মৃত্যু • মূল কারণ পারিবারিক কলহ পরকীয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে হঠাৎ বেড়েছে আত্মহত্যা

বরিশালে আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দুই বছর আট মাসে বরিশাল মহানগরীতে ৪৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিএমপির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে বরিশাল মহানগরীতে ১৫১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০২টি বিষপানে এবং ৪৯টি গলায় ফাঁস দিয়ে। ২০২১ সালে আত্মহত্যার ১৯৯টি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে বিএমপিতে। এর মধ্যে ১৩৮টি বিষপানে এবং ৬১টি জন গলায় ফাঁস দিয়ে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মহানগরীর ৪ থানা এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫২টি। সর্বাধিক ১৪০টি ঘটনা ঘটেছে কোতোয়ালি থানা এলাকায়। বাকি ১২টির মধ্যে বন্দর থানা এলাকায় চারটি, কাউনিয়া থানায় পাঁচটি এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় তিনটি। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বরিশাল মহানগরীতে। এর মধ্যে ৩৫৬টি বিষপানে এবং বাকি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে গলায় ফাঁস দিয়ে। এদের মধ্যে তরুণ-যুবদের সংখ্যা বেশি। পারিবারিক কলহ, সীমাহীন প্রত্যাশার সামান্যতমও পূরণ না হওয়া, মা-বাবার পরকীয়া ও অবৈধ আয়, ডিজিটাল ফাঁদে ফেলা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, চাকরি না পাওয়াসহ নানা অপ্রাপ্তির কারণে হতাশ হয়ে তরুণ-যুবরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, ধর্মীয় শিক্ষা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উদ্দীপনামূলক প্রচারণা এবং ছোটবেলা থেকে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন জোরালো করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, মানুষের সীমাহীন চাহিদার ন্যূনতমও পূরণ না হলে হতাশার সৃষ্টি হয়। হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তরুণ ও যুবরা। পরিবারিক কলহ, মা-বাবার পরকীয়া ও অবৈধ আয়, উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে বিয়ে না হওয়া, চাকরি না হওয়া, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও ডিজিটাল ব্লাকমেইলসহ নানা ঘটনায় অসম্মান ও অপমান বোধের কারণে আত্মহত্যা করেন অনেকে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, সন্তানদের গতিপ্রকৃতির ওপর অভিভাবকদের নজর রাখা এবং ভুল হলে তাদের শোধরানোর সুযোগ দেওয়া। সরকারি-বেসরকারি কিংবা শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তরুণ ও যুবদের মাঝে উদ্দীপনামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। পারিবারিকভাবে নৈতিকতা বোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দিতে হবে। অপরাধ বিশেষজ্ঞ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঁইয়া বলেন, অভিভাবকদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দিতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার এবং স্টুডেন্ট কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত।

শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন তারা। দিকনির্দেশনা দেবেন। অভিভাবকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক নেই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া হয় না। রাষ্ট্র, সমাজ এবং নাগরিকদেরও এ ক্ষেত্রে দায় আছে। এসব বিষয়ে নজর দিলে আত্মহত্যার ঘটনা নিশ্চিত কমবে বলে দাবি তার।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে কাউন্সিলিং নিশ্চিত করতে হবে। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে জীবনের নানা হতাশা, মাদকতা এবং সহিংসতা থেকে দূরে রাখা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ বিষয়ে পরিকল্পনা করে প্রোগ্রাম সাজাতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর