খুলনায় আলাদা ইস্যুতে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে একই পক্ষের আরও দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় ‘চেইন অব কমান্ড’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগেও নির্দেশনা ভেঙে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বড় খেসারত দিতে হয় আওয়ামী লীগকে। অন্যদিকে ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ সফল করতে প্রচারণা শুরু হলেও শীর্ষ নেতা সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ঘিরে ‘দ্বিধাবিভক্তি’ দেখা দিয়েছে আহ্বায়ক কমিটিতে। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এখন তাকে পুনর্বহালে কেন্দ্রের গ্রিন সিগন্যাল থাকলেও আপত্তি রয়েছে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে থাকা নেতা-কর্মীদের। তারা বলছেন, মঞ্জুসহ তার অনুসারীরা থাকলে রাজপথে থাকা সক্রিয় ত্যাগী নেতা-কর্মীরা পদবঞ্চিত হবেন। জানা গেছে, খুলনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে এবার বিএনপির প্রার্থী নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত খুলনা জেলা শাখার সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া সংগঠক এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। এর মধ্যে ডা. বাহারুল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম মোর্তজা রশিদী সুজার অনুসারী এবং দারা আওয়ামী লীগ নেতা সুজার ভাই। বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ডা. বাহার ও দারার প্রার্থী হওয়ায় জেলার রাজনীতিতে নেতৃত্বের পুরনো বিভেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে দারা তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক ভুলভাল বকছেন। আওয়ামী লীগ ওনার কাছে লিজ দেওয়া হয়নি। ওনার কাছে আমি পদ চাইব কেন? আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। বয়সের কারণে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।’ ফেসবুক স্ট্যাটাসে দারা আরও লিখেছেন- ‘মাননীয় সাংসদ সেখ জুয়েল প্রবীণ নেতার পুরনো কুকর্মের জন্য মাফ চেয়ে, ভবিষ্যতে উনি আর কুকর্ম করবেন না বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফুলতলায় নগর সাধারণ সম্পাদক বাবুল রানা ও রূপসায় জেলা দফতর সম্পাদক কচি ওনার কাছে ধরাশায়ী।’ এ ছাড়া দারা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে চিঠি দিয়েছেন। শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক থাকা অবস্থায় তিনি (ডা. বাহার) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য লেখায় নেতা-কর্মীর প্রতিবাদের মুখে তাকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে ২২ অক্টোবরের গণসমাবেশ সফল করতে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। কিন্তু একই সঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলনে দলের বৃহত্তর ঐক্যে বহিষ্কৃতদের ফেরাতে হাইকমান্ডের প্রস্তাবনায় টেনশনে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মাইনাস করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকা নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, মঞ্জু ও তার অনুসারীদের আবারও পুনর্বহাল করলে দলে পদপদবি নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও হতাশা দেখা দেবে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ধারাবাহিক আন্দোলনে খুলনার গণসমাবেশে স্মরণকালের বৃহত্তর গণজমায়েত করা হবে।’ তবে সাবেক শীর্ষ নেতাদের দলে পুনর্বহাল নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনো চিঠি হাতে পাইনি। তবে খুলনার মানুষের আস্থা বিশ্বাসের নেতা হচ্ছি আমরা। দলীয় কর্মীদের আস্থা বিশ্বাসের নেতাও আমরা। সবাই চায় আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে আবার ফিরে আসি এবং আমাদের নেতৃত্বে বিভাগীয় শহরে দলমত ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্ত ভূমিকা রাখুক। আমরা অপেক্ষায় আছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার।