দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা জাতির মাতৃভাষা ‘ককবরক’-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনুবাদ করা হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যুবরাজ দেববর্মা অনূদিত বইটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাইথাকয়া লাংমা’। ককবরক ভাষার শব্দদ্বয়ের বাংলা অর্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। সূত্রমতে, কক শব্দের অর্থ মানুষ আর বরক অর্থ ভাষা। যার শাব্দিক অর্থ করলে দঁাঁড়ায় মানুষের ভাষা। এ ভাষার জন্ম চীনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উৎসস্থলে। বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় ককবরক ভাষায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৬টি গোত্রের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ কথা বলেন। এ বিষয়ে যুবরাজ দেববর্মা জানান, ২০২০ সালকে প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষ ঘোষণা করার সময় আমার মধ্যে নিজের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কিছু করার ইচ্ছা জাগে। তখন নিজেদের ভাষাকে উপস্থাপন করে বাঁচিয়ে রাখতে ও জাতির পিতার আদর্শ ভিন্নভাবে ছড়িয়ে দিতেই তাঁর আত্মজীবনী অনুবাদের পথ বেছে নেই। দীর্ঘ দুই বছর সময় ব্যয় করে বইটি অনুবাদ করেছিলেন দেববর্মা। তবে এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ই তার কাছে ক্লান্তি এসেছিল। তবুও তিনি চালিয়ে গেছেন তার অনুবাদ।
দেববর্মা বলেন, ‘গ্রাজুুয়েশন শেষ করার পর স্বাভাবিকভাবেই পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপ থাকে। এসব সামলে কাজ করার মুহূর্তগুলোর কষ্ট বলে বোঝানো কঠিন। একটা সময় মনে হয়েছিল হাল ছেড়ে দিই, আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। তবে কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা আমাকে পুরো পা ুলিপিটি অনুবাদ করতে সাহস জুগিয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান প্রতিলিপিটি ছাপানোর বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা তাকে ‘ককবরক’ ভাষায় পারদর্শী তৃতীয় কাউকে দিয়ে নিরীক্ষা করানোর কথা বলেছি। নিরীক্ষা করালে আমরা দায়িত্ব নিয়ে ছাপিয়ে দেব।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, আমরা কোটবাড়ি এলাকার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য ককবরক ভাষার স্কুল স্থাপন ও বই প্রকাশ করেছি। কুবি শিক্ষার্থীর ককবরক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। তার জন্য শুভ কামনা।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর থেকে সর্বশেষ গ্রিক ভাষাসহ এ পর্যন্ত মোট ১৭টি ভাষায় গ্রন্থটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।