ফেনী-কুমিল্লা সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে মাদকের ডিলাররা। তাদের কলেই সীমান্তে যায় চক্রের প্রধান আকবরের গাড়ি। দেড়-দুই কিলোমিটার দূর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি রেকি করে অন্যরা। এভাবেই চার-পাঁচ জেলা পাড়ি দিয়ে আকবরের ফেনসিডিলের হাত দিয়ে চালান পৌঁছে যায় নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুর। তবে কখনো গ্রেফতার না হলেও আলী আকবরের (৩৫) এবার আর শেষরক্ষা হয়নি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে কাভার্ড ভ্যান ও জিপে থাকা ১ হাজার ৪৬৫ বোতল ফেনসিডিলসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন রিপন মিয়া (২৭) ও নুর হোসেন (৩৫)।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র?্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জিপের মালিক আলী আকবর চক্রের মূল হোতা। কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফেনসিডিলের চালানটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলী আকবরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তির চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ১৫ অক্টোবর রাত ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁও থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে ব্যক্তিগত জিপ নিয়ে রওনা হন আকবর। কুমিল্লার সোয়াগাজী পৌঁছানোর পর তিনি একটি হোটেলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে চক্রের পূর্বপরিচিত কাভার্ড ভ্যানের চালক নুর হোসেনকে ফোন করে সোয়াগাজী বাজারে অবস্থান করার জন্য বলেন।
কাভার্ড ভ্যানটি সোয়াগাজী বাজারে এসে পৌঁছালে কুমিল্লার ডিলার বস্তার ভিতরে ফেনসিডিল ভরে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে তালাবদ্ধ করে দেন। তারপর আলী আকবর জিপের ব্যাক ডালার ভিতরে বিশেষ কায়দায় তৈরি চেম্বারে ফেনসিডিল লোড করেন। সেগুলো তারা নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তির কাছে সরবরাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আগে আকবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বিভিন্ন খাবারের হোটেলে কাজ করতেন। পরে ঢাকায় এসে পাঁচ বছর ট্রাকে হেলপারি করেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। প্রথমে তিনি মাদক পরিবহনের কাজ করতেন, যার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে গাড়ি-বাড়ি, বিপুল সম্পত্তি ও নগদ অর্থের মালিক বনে যান। চোরাচালানের কাজ করার সময় আকবর ধরা পড়েননি।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার আলী আকবর নিজের জিপ থাকা সত্ত্বেও অধিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ ভাড়া করে মাদক পরিবহন করতেন। ঘটনার দুই দিন আগে ফেনসিডিল পরিবহনের উদ্দেশ্যে আলী আকবর ও তার চালক রিপন মিয়া কুমিল্লা যান। নুর হোসেনের কাছে কাভার্ড ভ্যান ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে কুমিল্লার ডিলারের সঙ্গে দরদাম করে আসেন।
র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে চক্রটি ফেনসিডিলের চালান কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে রাজধানীসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। মূলত আলী আকবরের নেতৃত্বে চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ফেনসিডিল পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করত।
চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ফেনসিডিল পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করত। কুমিল্লার সোয়াগাজীর সিন্ডিকেট থেকে ফেনসিডিল সংগ্রহের পর কখনো আলী আকবর নিজে, আবার কখনো তার নির্দেশনায় গ্রেফতার নুর হোসেন দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান পৌঁছে দিতেন। গত তিন বছরে চক্রটি ৫০টির বেশি চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে কোটি টাকা কামিয়েছে।