রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মৌসুম শেষেও আগ্রাসী ডেঙ্গু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মৌসুম শেষেও আগ্রাসী ডেঙ্গু

সাধারণত এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এবার পুরো অক্টোবরজুড়ে চলছে ডেঙ্গুর তাণ্ডব। এ মাসের ২৯ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৯ জন, মারা গেছেন ৭৯ জন। মৌসুম শেষেও এবার ডেঙ্গুর আগ্রাসী রূপে বাড়ছে শঙ্কা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে অক্টোবরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। কিন্তু রোগী না থাকলে মশা বাড়লে ক্ষতি হয় না। এবার রোগীও ছিল আবার মশার ঘনত্বও বেশি থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত জ্যামিতিক হারে বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হটস্পট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেখান থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি আসে, সেখানে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হয়। তাহলে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। আশা করছি নভেম্বরে কমে আসবে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর মাস প্রায় শেষ তবু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এমন পরিস্থিতি গত ২০ বছরেও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতে বাড়ির আনাচে-কানাচে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হচ্ছে। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ১৩১ জন, মারা গেছেন ১৩৪ জন। জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৩ জন, জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৭ জন, মারা গেছেন একজন। এ বছর ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন রোগী মারা যান। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭১ জন, মারা গেছেন নয়জন। আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২১ জন, মারা গেছেন ১১ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হন ৯ হাজার ৯১১ জন, মারা যান ৩৪ জন। অক্টোবরে ২৯ দিনে বছরের সব রেকর্ড ভেঙে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৩৯ জন, মারা গেছেন ৭৯ জন। গত বছরের অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৬৭ জন, মৃত্যু হয়েছিল ২২ জনের। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬২ জন। এ বছর মৃত্যু হয়েছিল তিনজনের। ২০ বছরের মধ্যে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দেয় ২০১৯ সালে। ওই বছর অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ৮ হাজার ১৪৩ জন এবং মৃত্যু হয় ১১ জনের। এ বছর সে রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৯ জন, মারা গেছেন ছয়জন। ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮১ জন, ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৮ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৫৯৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক, রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

দীর্ঘ ২২ বছরে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। যে ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে তা কার্যকর হয়নি। এখানেই শেষ নয়, সামনে আরও এক মাস কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে কিছু বিশেষ দিক আছে। যেমন এবার বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ হচ্ছে। এ দুটো দিক মিলিয়ে দেখলে সেটা খুব চিন্তার বিষয়ই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা শুধু এ বছরের জন্য নয়, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে সামর্থ্য আমাদের রয়েছে তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না- এসব নিয়ে ভাবতে হবে। এ অবস্থায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর