বরিশাল মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে গেছে। ১৪টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্কের পর বাকি ১৬টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ওয়ার্ডের কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে ব্যানার ছাড়া। তৃণমূল নেতারা বলছেন, সামনের সারির বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে স্বীকার করে শিগগিরই বাকি ওয়ার্ড কমিটিগুলো ঘোষণার কথা বলেছেন শীর্ষ নেতারা। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করে মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্র। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি ৪২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন পায়। আহ্বায়ক কমিটিতে পরীক্ষিত অনেক নেতাকে বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয়দের স্থান দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মহানগর বিএনপির সাবেক নেতাদের মাঝে। বিতর্কের পর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও একজন সদস্যকে প্রধান করে সাতটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল যুগ্ম আহ্বায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং পয়লা অক্টোবর দুই দফায় ঘোষিত ১৪টি ওয়ার্ড (৭, ৮, ১০, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৭ ও ৩০) কমিটি গঠনে সাংগঠনিক টিমের মতামত গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও টিম লিডার হাবিবুর রহমান টিপু জানান, চারটি ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কমিটি নেতাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। দুটি কমিটি ঘোষণা হয়েছে। বাকি দুটি ঘোষণার অপেক্ষায়। ঘোষিত দুটি কমিটিতে কিছুটা আপত্তি থাকলেও পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। আরেক টিম লিডার ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, তার তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বাকি দুটি কমিটি কেন ঘোষণা হচ্ছে না তা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ভালো বলতে পারবেন। মহানগর বিএনপির সাবেক সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব শাহিন তালুকদার কোনো দিন বিএনপি করেননি। একই ওয়ার্ডের আহ্বায়ক টিপু নেগাবান ১৫ বছর ধরে দলে নিষ্ক্রিয়। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব বিএনপির নয়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য সচিব করা হয়েছে যুবদল নেতা আমির খসরুকে। এই ওয়ার্ড বিএনপির ১ নম্বর সদস্য মাসুম খলিফা সিটি মার্কেট সংক্রান্ত আওয়ামীপুষ্ট কমিটিরও সদস্য। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব দুলাল ২০ বছর আগে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও পরীক্ষিতদের পাশ কাটিয়ে মনগড়া কমিটি করার অভিযোগ তার। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাকির হোসেন মিন্টু বলেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা আন্দোলন কিংবা নির্বাচনী বৈতরণী পার করার যোগ্যতা রাখেন না। এ নিয়ে ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন।
বিতর্ক ওঠার পর ৫ নভেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশের আগে কেন্দ্রের এক নির্দেশে অন্য ১৬টি ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য মীর জাহিদুল কবির বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। বর্তমান কমিটি কাজে বিশ্বাসী। শিগগিরই আলোচনা সাপেক্ষে মহানগরীর বাকি ১৬টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করার কথা বলেন তিনি।
