সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীতে সন্ত্রাসী গ্রুপের আট সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে)’ সন্ত্রাসী গ্রুপের হোতা হƒদয় ওরফে হিটার হƒদয়সহ তার সহযোগী আটজনকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, চারটি চাকু (বড় ও ছোট), দুটি হাঁসুয়া, একটি কাঁচি এবং একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- বিডিএসকে গ্রুপের সমন্বয়ক রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন, রাসেল ওরফে কালো রাসেল, আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন, লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান, আশিক ওরফে হিরো আশিক, জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের ও মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন। এরা দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় আধিপত্যসহ চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এই গ্যাং এর প্রধান হƒদয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অন্তত ২৫ জন সদস্য। সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনার পাশাপাশি লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত হিটার হƒদয়। মূলত, এই সন্ত্রাসী গ্রুপ টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত।

 গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানার তিন রাস্তার মোড় থেকে একজনকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে ওই ভুক্তভোগীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরে তার মৃত্যু হয়। একইভাবে এ ঘটনার কিছুদিন আগেও একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার তদন্তে নেমে র‌্যাব বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, ৮/১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে, ‘বিডিএসকে গ্রুপের লিডার হƒদয় ওরফে হিটার হƒদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাই হয়েছে। এরপর এই গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। গ্রেফতাররা ‘বিডিএসকে’ গ্যাং এর সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে হƒদয় ওরফে হিটার হƒদয় গত দুই বছর ধরে ‘বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)’ গ্যাং এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। দলের গ্যাং লিডার হƒদয় ওরফে হিটার হƒদয়ের নেতৃত্বে বিগত দুই বছর আগে গ্যাংটি গঠন হয়। এ গ্রুপের সদস্যরা এর আগে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতাররা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত। তারা মাদক সেবনসহ মাদকের কারবার করত। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভ টিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। বিডিএসকে গ্রুপের লিডার হƒদয় ওরফে হিটার হƒদয় স্থানীয় একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করেছে। তার সহযোগী রবিন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। বিডিএসকে গ্যাং এর বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে সে হƒদয়ের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এই গ্যাং এর সদস্য হিসেবে অপরাধ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আদাবর এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কাজ করত সে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকবার কারাভোগও করেছে। রাসেল এই গ্যাং এ কাজের পাশাপাশি লেগুনা চালাত। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছয়টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে সে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেছে। আলামিন বিডিএসকে গ্যাং এর সদস্য হিসেবে কাজ করত। সে আদাবর এলাকায় অটোরিকশা চালক ছিল। তাদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের স্থানীয় একটি স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। আশিক ‘বিডিএসকে’ গ্যাং এর সদস্য হিসেবে কাজ করত। আশিক ও জোবায়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় এক সঙ্গে রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করত। সুমন মোহাম্মদপুর ও বেড়িবাঁধসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি চালাত। তারা কয়েক বছর ধরে এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর