সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখল আর দূষণে ধুঁকছে রাজশাহীর ৪০ নদ-নদী

বেলার কর্মশালায় তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দখল আর দূষণে ধুঁকছে রাজশাহী বিভাগের অন্তত ৪০টি নদ-নদী। দুই পাড় দখলের কারণে বেশির ভাগ নদ-নদী মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। আবার সরকারের অপরিকল্পিত পদক্ষেপই কিছু নদ-নদীর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। রাজশাহী বিভাগীয় নদী বিষয়ক কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সকালে নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগের নদীগুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে উঠে আসে, রাজশাহী বিভাগের ৪০টি নদ-নদী এখন দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। অনেক নদী একেবারে হারিয়ে গেছে। কোনো কোনো নদী দখলের কারণে দীর্ঘ এলাকায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও নদীর মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহীর চারঘাট থেকে শুরু হওয়া বড়াল নদেরও মৃত্যু হচ্ছে পাউবোর ভুল সিদ্ধান্তে- এমন অভিযোগও আনা হয়েছে বেলার তথ্যে।

 এতে বলা হয়, চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসেবে বড়াল নদের উৎপত্তি। ২২০ কিলোমিটার এর দৈর্ঘ্য। এই নদীর সঙ্গে সংযোগ ৫০ লাখ মানুষের। কিন্তু দখলের কারণে নাটোরের বড়াইগ্রামে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এই নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। নদীটির মৃত্যুর জন্য পাউবোর ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী। ১৯৮১ সালে বড়ালের উৎসমুখে স্লুইসগেট দেয় পাউবো। তারপর থেকেই এ নদে পানিপ্রবাহ কমতে থাকে। ১৯৮৫ সালে নদের ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে আটঘড়ি নামক স্থানে আরেকটি বাঁধ পড়ে।

এরপর ১৯৮৫ সালে নদের ১২৫ কিলোমিটার ভাটিতে তিনটি ক্রস বাঁধ দেওয়া হয়। এতে নদের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে। এভাবে বিভাগের আট জেলার অন্তত ৪০টি নদ-নদী মৃতপ্রায় অবস্থায় আছে।

তবে এসব নদীর প্রাণ বাঁচাতে বেশ কিছু সুপারিশ উঠে আসে কর্মশালায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদ-নদীকে বাঁচাতে প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণে গবেষণা করতে হবে। করতে হবে নদীর ডাটাবেজ। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সব নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। দখল-দূষণসহ নদীবিরোধী সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। নদীর ওপর নির্মিত ছোট ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে উঁচু করে নির্মাণ করতে হবে। শোধন ছাড়া কোনো বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না। শহরে নদীর দুই ধারে পায়ে হাঁটা রাস্তাসহ বসার ব্যবস্থা করে নগর পরিকল্পনা করতে হবে। নদীপাড়ে লাগাতে হবে ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষ। লোকায়ক জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে নদী সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নদীর তথ্য নিয়ে বের করতে হবে পুস্তিকা। রচনা করতে হবে লোকগান। সর্বোপরি নদী রক্ষায় নিতে হবে আইনি পদক্ষেপ। তাহলেই নদ-নদীগুলো টিকে থাকতে পারবে।

সর্বশেষ খবর