মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে ডিআরএস ও গ্যাস পাইপলাইন চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে ডিআরএস ও গ্যাস পাইপলাইন চালু

বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেডের (বিআইইজেডএল) নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে চালু হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশন (ডিআরএস) ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন। গতকাল (সোমবার) ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার ডিআরএস ও সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন হেড অব প্রজেক্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানের সচিব ফয়েজুর রহমান।

কেজিডিসিএলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (জোন-১৫) বিআইইজেডএলের নিজস্ব প্রকল্প অঞ্চলে বহুল প্রতীক্ষিত এ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস সরবরাহ স্টেশন ও সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। যা বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (বিসিআইএল), বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (বিএমএসআইএল) মতো চলমান ও আগামীর প্রকল্পগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেজিডিসিএল প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাহিদ আলম, কেজিডিসিএল মহাব্যবস্থাপক (আইটি ও প্রিপেইড মিটারিং) প্রকৌশলী রইস উদ্দিন আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-দক্ষিণ) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুণ্ড, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন, ভারপ্রাপ্ত) মোজাহার আলী, বিআইজেডএলের পক্ষে বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকল্প প্রধান মো. জুলফিকার রহমান, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকল্প প্রধান মো. মাজেদুল ইসলাম, এইচওডি এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন ইমরান বিন ফেরদৌস, এইচওডি মার্কেটিং এ- বিডি সেক্টর-সি মো. তৌফিক হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিআইইজেডএলের পক্ষে প্রকৌশলীদের ডিআরএস ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সময় ব্রিফিংয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান টেকসই এনার্জি সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন এবং এই ডিআরএসকে ফলপ্রসূ করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়াও সব প্রকল্পের জন্য আরও টেকসই এবং কার্যকর চালিকাশক্তি হিসেবে তিনি ডিআরএসের ভূমিকা তুলে ধরেন।

বসুন্ধরাকে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পগ্রুপ উল্লেখ করে কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্প কারখানায় মূল চালিকা হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। সেই প্রাকৃতিক গ্যাসটাই আমরা এখানে সরবরাহ করব। এর ফলে এখানে শিল্পায়ন হবে, প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে তেমনি এতদিন বিদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করতে হতো সেসব পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’ বেসরকারি পর্যায়ে এলএনজি আমদানি করা যাবে উল্লেখ করে কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে এলএনজি আমদানির নীতিমালা তৈরি করা আছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবেন। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপ ও ওমেরা থেকে আবেদন পেয়েছিলাম যে তারা এলএনজি আমদানি করতে চায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি করা হয়েছিল। এ নীতিমালা আমার হাতে ড্রাফট করা। সেই নীতিমালা এখনো আছে। চাইলে আপনারা এলএনজি আমদানি করতে পারেন।’
শিল্পায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে ধাপে ধাপে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা এখানে ১১ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন এবং ৬ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করেছি। দৈনিক ২০০ কিলোমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন সিজিএস স্থাপন করেছি। এ ছাড়া ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটো ডিআরএস স্থাপন করেছি। প্রথম পর্যায়ে যারা সংযোগ গ্রহণ করবেন তাদের চাহিদা পূরণ করব। এরপর ধাপে ধাপে চাহিদা বাড়লে আমরাও সেভাবে কাজ করব যাতে সবার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু দেশি গ্যাস উৎপাদন করে থাকি। আর কিছু আমদানি করে থাকি এলএনজি আকারে। গভীর সমুদ্রে আমাদের দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। সে টার্মিনালের মাধ্যমে আমরা এলএনজি সরবরাহ করছি। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনে শতভাগ এলএনজি ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পনা আছে মাতারবাড়ীতে আমরা একটি ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল করব। সেখানে প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার হবে পরবর্তীতে তা সম্প্রসারণের সুবিধা থাকবে।’

হেড অব প্রজেক্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানের সচিব ফয়েজুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এ কারখানাগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ খুবই জরুরি। তাই প্রত্যেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাবে এটাই প্রত্যাশা করি। এখানে আমাদের কেমিক্যাল কারখানা হতে যাচ্ছে। কেমিক্যাল কারখানার অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে গ্যাস ও পানি। সঠিকভাবে গ্যাস সরবরাহ না হলে কেমিক্যাল কারখানাকে বড় লোকসান গুনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান গ্যাস সংকটে কাজ করতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ। বেসরকারি পর্যায়ে এলএনজির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়। সে ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিলে আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কেজিডিএলসিকেও গ্যাস সরবরাহ করতে পারব।’

বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকল্প প্রধান মো. জুলফিকার রহমান বলেন, ‘ডিআরএস উদ্বোধন হওয়া মানে কেমিক্যাল প্রকল্পের একটি অংশ উদ্বোধন হওয়া। কারণ আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি এই কারখানার মূল কাঁচামাল যে প্রাকৃতিক গ্যাস তার কোনো অভাব হবে না। তবে বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কমিশনিং শুরু হবে আগামী মে মাসে। তখন ধাপে ধাপে এই গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যাবে। এই জোনে আমাদের আরও কেমিক্যাল প্রজেক্ট আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে যে পণ্য তৈরি হবে তা খুবই সফিসটিকেটেড। আমাদের গার্মেন্ট সেক্টরে বিলিয়ন ডলারের কেমিক্যাল লাগে। এর মধ্যে এসিটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড, ফরমালডিহাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং মেলামাইন ও মেলামাইন মোল্ডিং সব ধরনের কেমিক্যাল এখানে হবে। এ ছাড়া পেট্রোলিয়ামে ব্যবহৃত মিথানল এখানে  তৈরি হবে। এটা বেসরকারি খাতে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বড় কেমিক্যাল প্রকল্প।’

কেজিডিসিএল জিএম (বিপণন-দক্ষিণ) ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান বলেন, বসুন্ধরাকে আমরা গ্যাস সরবরাহ করছি এটাই আমাদের বেশি প্রশান্তি দিচ্ছে। বসুন্ধরাসহ অন্য শিল্পগ্রুপগুলো এগিয়ে আসায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের লোকজনকে সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশে যেতে হবে না চাকরির জন্য। দেশে চাকরির অভাব হবে না। বরং অন্য দেশ থেকে লোকজন আসবে এ দেশে চাকরি করার জন্য।    

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে কেজিডিসিএল প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ আলম বলেন, এ শিল্পনগরী সমুদ্রের পাশের হওয়ায় একটি ভালোমানের ডিআরএস বসানো দরকার ছিল। আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিই ডিআরএস বসুন্ধরার মাধ্যমে এ কাজ করা হলে ভালো হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বসুন্ধরার মাধ্যমে এ কাজ করা হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর