মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

শৃঙ্খলা ফিরছে চট্টগ্রামে

৬০ বছর পর পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা, ব্যয় হবে ৪ হাজার কোটি টাকা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

শৃঙ্খলা ফিরছে চট্টগ্রামে

নগরে সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কাজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পরও সেই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দার পয়ঃবর্জ্য নালা-নর্দমা ও খাল হয়ে গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। দূষিত করছে নদীর পানি। তবে বিলম্বে হলেও ওয়াসা প্রথমবারের মতো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের’ অধীনে নগরে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে আজ হোটেল র‌্যাডিসনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ মতবিনিময় সভার। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিসহ নানান ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করা অংশীজনদের নিয়ে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রসঙ্গত, নগরের ২০ হাজারের বেশি বহুতল ভবনের অন্তত অর্ধেক ট্যাংকের নিচে ফুটো। এ ফুটো দিয়ে বর্জ্য ভবনের পাশের ড্রেনে চলে যায়। এরপর নালা-নর্দমা ও খাল হয়ে নগরের সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে। ওয়াসাসূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অধীন পুরো নগরকে ছয় ভাগে ভাগ করে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ জনগোষ্ঠীকে এ প্রকল্পের আওতায় আনতে নগরের হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির ওপর দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা দৈনিক প্রায় ১০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলা হবে। অন্য প্লান্টটি ফিক্যাল প্লাসের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা পয়ঃবর্জ্য) মাধ্যমে সংগ্রহ করে দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটি বড় একটি সুখবর। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের পয়ঃবর্জ্যগুলো পরিবেশসম্মতভাবে পরিশোধন করে সাগরে ফেলা হবে। যথাসময়ে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলা কঠিন কাজ। পানির পাইপ চালানো যত সহজ, স্যুয়ারেজ পাইপ চালানো তত কঠিন। পানির পাইপ একটি সড়কে ১ দশমিক ২ মিটার বা ৪ ফুট গভীরে স্থাপন করলে হয়। কিন্তু স্যুয়ারেজের পাইপ বসাতে হয় সর্বোচ্চ ১২ মিটার নিচে। চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পাইপের স্তর ঠিক রাখতে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় ৪০ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করে পাইপ স্থাপন করতে হবে। নইলে বর্জ্য পাইপের বদলে ম্যানহোল দিয়ে ওপরে উঠে আসবে। তাই কাজটি কঠিন। চট্টগ্রাম ওয়াসার এক সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটার হবে। এ ছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্ল্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে; যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে। ফলে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণ করছে। আগামীতে চট্টগ্রাম নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপে নগরীর হালিশহর ক্যাচমেন্টভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে : এনায়েত বাজার, উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, পশ্চিম মাদারবাড়ী, পূর্ব মাদারবাড়ী, আলকরণ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর-মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গি বাজার ও দক্ষিণ-মধ্য হালিশহরের আংশিক। প্রায় ৩৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পয়ঃ পাইপলাইন স্থাপনের আওতায় পুরো এলাকাটিকে এ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মহানগরীর যেসব এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে না সেসব জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪১ ভাগ নিরাপদ সেপটিক স্ল্যাজ ব্যবস্থাপনার আওতায় আসবে। যেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর