রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র আঁধার কেটে আলোর পথে। খুলছে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সংগ্রহশালার নতুন দ্বার। স্মৃতি কেন্দ্রটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে পায়রাবন্দের চেহারা। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র, এই গবেষণা কেন্দ্রে নারীরা প্রাধান্য পাবেন। এ ছাড়া সংগ্রহশালা, গ্রহন্থাগার, হেলথ সেন্টার, ধাত্রী, হস্তশিল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তমঞ্চসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় একটি স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রটি রয়েছে মাত্র ৩ একর ২৫ শতক জমিতে। সেসময় স্মৃতি কেন্দ্রে একটি অফিস ভবন, গেস্ট হাউস, মিলনায়তন, ডরমেটরি, গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার করা হয়।
স্মৃতি কেন্দ্রের ভিতর মনোরম পুকুরপাড়ে তৈরি করা হয় বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য। ২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। বর্তমানে গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে যুগোপযোগী বই ও সাময়িকী নেই। মিলনায়তনের অবস্থাও খুব খারাপ। মঞ্চ ভেঙে গেছে অনেক আগেই। অধিকাংশ চেয়ারই ভাঙা। মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে থাকলে অধিকাংশ মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। সংগ্রহশালার স্থাপনা থাকলেও মূলত সংগ্রহে কিছুই নেই সেখানে। স্মৃতি কেন্দ্রটি বাংলা একাডেমি দেখাশোনা করে। দীর্ঘদিন থেকে স্মৃতি কেন্দ্রটি সংস্কার ও উন্নয়নের দাবি উঠে আসছিল। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের সবুজ পাতায় তালিকাভুক্ত হয়েছে। চলতি ২০২৩ জুলাই থেকে ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। স্থাপত্য অধিদফতর নকশা প্রণয়ন করবে। রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান বিগত ২০০৭ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্মৃতি কেন্দ্রকে বিকেএমই গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়। সেনাসমর্থিত সরকার চলে যাওয়ার পর এটি দখলমুক্ত করে রোকেয়া চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার দাবি থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি। রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেন সাহেবের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় যান।
