ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ আসন্ন। রাজধানীতে হাট শুরু না হলেও দেশের খামার এবং অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বেচাকেনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এমনকি গ্রামের হাটগুলোতেও ১৫-২০ দিন আগেই পশু কিনে রাখছেন। এবারও বেশি আছে দেশে লালনপালন করা পশু। পর্যাপ্ত দেশি পশু থাকলেও দাম নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। কয়েক বছর ধরেই আমদানি করা পশুর প্রয়োজন হচ্ছে না। এবারও যেন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কড়া নজরদারি রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির চাহিদার চেয়ে এ বছর ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি পশু বেশি আছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যে দেখা যায়, এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭। এর মধ্যে গরু-মহিষের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৭১৬, ছাগল-ভেড়া ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৮০১। এ ছাড়া উট, দুম্বা ও গাড়ল রয়েছে ১ হাজার ৮৫০টি। কোরবানিযোগ্য যত পশু রয়েছে এর মধ্যে গরু বেশি রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে এবং ছাগল বেশি আছে রাজশাহী বিভাগে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতে কোরবানির সময় এখন আর পশু আমদানি দরকার হয় না। আমাদের দেশের আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। খামারিদের তৈরি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। খামারিদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য চোরাইভাবে কোনো গরু দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য সীমান্তে সতর্কাবস্থা থাকবে।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান বলেন, ‘পর্যাপ্ত পশু যেহেতু আছে, আমাদের প্রত্যাশা সবাই সাধ্যের মধ্যেই কোরবানির পশু কিনতে পারবেন। ঢাকায় যেসব হাট বসবে তা নিয়ে আমরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছি।’ রাজধানীসহ বড় শহরে হাট বসতে এখনো ১৫ দিনের মতো বাকি। এরই মধ্যে জমে উঠেছে স্থানীয় পর্যায়ের গ্রাম্য হাট। ব্যাপারীরা হাট থেকে গরু কিনে সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শহরে যাওয়ার। একই সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাগ্রো ফার্ম ও অনলাইনে চলছে বেচাকেনা। গত কয়েকদিনে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলা শহরে একাধিক অ্যাগ্রো ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের ঈদের বেচাকেনা শেষ পর্যায়ে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের হলিউড অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক মো. পারভেজ বলেন, ‘শতাধিক গরুর মধ্যে ৭০টির বেশি বিক্রি শেষ। তবে দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি।’ নরসিংদীর বাগানবাড়ি অ্যাগ্রো ফার্মের দায়িত্বে থাকা মো. শরিফ বলেন, ‘১৭০টি গরু অলরেডি বিক্রি হয়ে গেছে।’ বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)-এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু রয়েছে। এ কারণে গতবারের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকবে।’ কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের যারা বেচাকেনা করছেন তারা বলছেন, পশুর খাবারসহ খামারের যাবতীয় ব্যয় অত্যধিক বেড়েছে এবং পশুর বাজারে এর একটা প্রভাব থাকবে। সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. ইমরান হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, ‘লাইভ ওয়েটের ক্ষেত্রে আমরা ৪০০ কেজির কম গরুর দাম ৫০০ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছি। গতবার এটি ছিল ৫২৫ টাকা। খামারিরা লোকসান দিয়েই বিক্রি করছেন, কারণ সরবরাহ বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আমার খামারে ছোট গরু সব বিক্রি শেষ। তবে বড় গরু বিক্রি এখন পর্যন্ত কম।’ এক থেকে দেড় লাখ গরুর চাহিদা সব সময় বেশি থাকে, বলেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে দাম নিয়ে নানা মত পাওয়া যায়। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়াহাট থেকে পশু কেনেন আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গতবার যে গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখে মিলত, তা এবার ১ লাখ ২০-২৫ হাজার।’
প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন খামারি বলেছেন, বাজারে পশুর খাবারসহ খামারের যাবতীয় ব্যয় অত্যধিক বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পশুর দামে। এ ছাড়া এবারের তাপপ্রবাহের সময় গরুগুলোর পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে বলেন অনেকে। রাজধানীতে ২০ স্থানে পশুর হাট বসবে। নিয়ম অনুযায়ী ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন হাট বসার কথা থাকলেও তারও কয়েক দিন আগেই গরু নিয়ে হাটে আসেন বিক্রেতারা। রাজধানীর প্রতিটি হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটি করে মেডিকেল টিম থাকবে, তবে গাবতলীতে থাকবে দুটি টিম।